ডিএসসিসির ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষ থেকে দরপত্র ছিনতাই

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামানের দফতরে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে মারধর করে প্রায় ৩৬ লাখ টাকার দরপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (৭ জুন) দুপুরের দিকে সংস্থার মালিকানাধীন নিউ মার্কেট এলাকার কার পার্কিংয়ের ইজারা নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ উঠেছে, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে নিউ মার্কেট থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম ও ডিএসসিসির ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগ সভাপতি ফরমান মোল্লার লোকেরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। শফিকুল ইসলামের প্রতিষ্ঠান রিমন এন্টারপ্রাইজ ওই পার্কিং এলাকার বর্তমান ইজারাদার। তিনি এবারও ইজারা নেওয়ার জন্য দরপত্র জমা দেন।

ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, নিউ মার্কেটের আশপাশের এলাকায় গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য গত ২৩ মার্চ দরপত্র আহ্বান করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। পার্কিংটির ইজারা মূল্য ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ ৯৮ হাজার ১০০ টাকা। প্রথম দফায় আশানুরূপ দর পায়নি কর্তৃপক্ষ। পরে পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এ দফায় তিনটি শিডিউল বিক্রি হয়। এরমধ্যে মাত্র একটি শিডিউল জমা পড়ে। বাকি দুটির মধ্যে একটি ক্রয় করে জাহান এন্টারপ্রাইজ। সোমবার দুপুরে জাহান এন্টারপ্রাইজের দরপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার পর বাকি দরপত্রটি জমা পড়েনি।

জানা গেছে, সোমবার ছিল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। নির্ধারিত সময়ের আগেই শিডিউল জমা দিতে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার দফতরে যান জাহান এন্টারপ্রাইজের জেনারেল ম্যানেজার তুষার কান্তি ঘোষ। কিন্তু ‘দরপত্র বাক্সে’ দরপত্র জমা দেওয়ার আগেই  কিছু লোক তাকে ধাওয়া দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরে তিনি দরপত্র নিয়ে সংস্থার সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামানের কক্ষে আশ্রয় নেন।

তুষারের ভাষ্য, এ সময় সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান তার দফতরে উপস্থিত ছিলেন না। পরে তিনি দফতরে আসেন। এর কিছুক্ষণ পর মনিরুজ্জামান কক্ষ থেকে বের হয়ে গেলে কিছু লোক তার ওপরে হামলা করে শিডিউল ছিনিয়ে নেয়। হামলাকারীরা ডিএসসিসির ১৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি ফরমান মোল্লার লোকজন বলে জানান তিনি। এ কারণে তিনি টেন্ডারে দরপত্র জমা দিতে পারেননি। তবে ফরমান মোল্লার ভাষ্য— নিউ মার্কেট থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম রিমন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে টেন্ডার ড্রপ করেন। এর সঙ্গে তিনিসহ আরও অনেকেই যুক্ত রয়েছেন।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান (সিনিয়র সহকারী সচিব) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি উনাকে (তুষার) আমার সঙ্গে গিয়ে দরপত্র জমা দিতে বলেছি। কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে যাননি। এখানে আমাদের দফতরের লোকজন ও আনসার সদস্যরা রয়েছেন। এমন ঘটনা ঘটলে তারা আমাদের জানাতো। বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সময়ে এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস কারও নেই।’

তুষার কান্তি ঘোষ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি নিরাপত্তাহীনতায় ছিলাম। সে জন্য তার (সম্পত্তি কর্মকর্তা) সঙ্গে আমি যাইনি। আমার কিছু হয়ে গেলে তখন কে তার দায় নিতো। দফতরের সামনের সিসি টিভি পর্যবেক্ষণ করলেই তো ঘটনার সত্যতা পাওয়া যাবে।’

জাহান এন্টারপ্রাইজের মালিক শেখ শওকত আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার নগর ভবনে শিডিউল ড্রপ করতে গেলে ফরমানের লোকজন তা ছিনিয়ে নেয়। দফতরের সামনের সিটি টিভির ফুটেজগুলো দেখলেই বিষয়টি বেরিয়ে আসবে। অভিযোগ করেও কোনও প্রতিকার পাইনি। এ ধরনের ঘটনা বর্তমান প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে। মেয়র তপসের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।’

জানতে চাইলে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি ফরমান মোল্লা বলেন, ‘‌এমন কিছু হয়নি। পার্কিংটি ইজারার জন্য মেয়র সাহেব নিউ মার্কেট থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের শফিকুল ইসলামসহ আমাদের কয়েকজনকে ভাগ করে দিয়েছেন। তার মধ্যে আমিও  আছি। কিন্তু টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি।’ এ বিষয়ে শফিকুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য সংস্থার প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিনকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে সার্বক্ষণিক কঠোর নিরাপত্তা ও সিসিটিভি মোড়ানো দফতরটিতে প্রকাশ্যে টেন্ডার ছিনতাইয়ের এমন ঘটনা করপোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে বলে মনে করেন সাধারণ ঠিকাদাররা।