স্ত্রী হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির দণ্ড কমে যাবজ্জীবন

২০০৬ সালে নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রথম স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে হাইকোর্টের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এই আসামিকে কনডেম সেল থেকে সাধারণ সেলে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আসামির আপিল আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (১২ জুলাই) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই রায় দেন।

আদালতে আসামির পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরসেদ। 

এর আগে গত ৮ জুলাই মামলার শুনানিতে ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতকে বলেন, স্ত্রী স্বপ্না ঘোষকে পূর্ব পরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়নি। পারিবারিক ঝগড়ার এক পর্যায়ে উত্তেজিত অবস্থায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে আসামি স্বপন কুমার বিশ্বাসকে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন দণ্ড কোনটাই দেওয়া সমীচীন হবে না। এ মামলায় প্যানাল কোডের ৩০৪/২ ধারা অনুযায়ী আসামির সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছরের বেশি হতে পারে না।

একইদিনে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতকে জানান, কারাগার থেকে স্বপন কুমার বিশ্বাস নামে ওই ফাঁসির আসামি অনেক কাকুতি-মিনতি জানিয়ে আমাকে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে লিখেছেন, তিনি দরিদ্র মানুষ। আইনজীবী রেখে মামলা পরিচালনা করার সামর্থ্য তার নেই। এ কারণে তার মামলাটি আমি ফ্রি'তে পরিচালনা করেছি।

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের ১৬ অক্টোবর নীলফামারীর সৈয়দপুর থানার নয়াটোল গ্রামে প্রথম স্ত্রী স্বপ্না ঘোষকে (৩৫) হত্যার অভিযোগ ওঠে তার স্বামী স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। তাকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করার ঘটনায় ঝগড়ার এক পর্যায়ে স্ত্রীকে মাথায় আঘাত করে খুন করা হয়। পরে তাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। একই বছরের ২৮ অক্টোবর সৈয়দপুর থানার পুলিশের এসআই শফিউল হক নিহতের স্বামী স্বপন কুমার বিশ্বাসের নামে মামলা করেন। ওইদিনই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

১৩ জনের সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে ২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর নীলফামারীর দায়রা জজ আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

এরপর ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল বিচারপতি সাহিদুল ইসলাম ও বিচারপতি আব্দুর রবের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে স্বপন কুমার বিশ্বাস আপিল করেন। একই সময়ে তার মামলাটি বিনা ফিতে পরিচালনা করতে আইনজীবীকে চিঠি দেন তিনি।