যমুনার চেয়ারম্যান বাবুল ও তার স্ত্রী-ছেলের বিচার শুরুর নির্দেশ

যমুনার বাবুল ও তার স্ত্রী-ছেলের বিচার শুরুর নির্দেশবেআইনিভাবে হান্টার ও ক্রাউন বিয়ার উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মামলায় যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বাবুল ও তার স্ত্রী, ছেলে ও জেনারেল ম্যানেজার মো. সুরুজ রহমান শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছে ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।
প্রায় ১১ বছর আগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানায় দায়ের করা এ মামলায় মঙ্গলবার অভিযোগ গঠনের পর আগামী ১৯ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেন বিচারক আবদুর রহমান সরদার।
এ ট্রাইবুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মাহফুজুর রহমান লিখন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, নূরুল ইসলাম বাবুল, তার স্ত্রী সালমা ইসলাম এবং তাদের ছেলে শামীম ইসলাম নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান। কিন্তু বিচারক তাদের পক্ষে দাখিল করা অব্যাহতির আবেদন নাকচ করেন। এ সময় বাবুল এবং সালমা তাদের ব্যক্তিগত হাজিরা মওকুফ করে আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরার আবেদন করেন। তবে বিচারক শুধুমাত্র সালমা ইসলামের আবেদন মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ১৭ নভেম্বর তাদের হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক আবদুর রহমান সরদার। মামলাটির কার্যক্রম দীর্ঘদিন হাইকোর্টে স্থগিত ছিল বলে নথিপত্রের সূত্রে জানা যায়।

 গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সফিপুরে অবস্থিত যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মেসার্স ক্রাউন বেভারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল ইসলাম বাবুলের ছেলে শামীম ইসলাম। তার বিরুদ্ধে ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২২(গ) ধারায় বেআইনিভাবে অ্যালকোহল জাতীয় পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. আজাদুল ইসলাম ছালাম ২০০৪ সালের ৮ মার্চ এ মামলা করেন।

 মামলা দায়েরের ২৩ দিন পর ৩১ মার্চ শামীম ইসলামসহ বেভারেজ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক নূরুল ইসলাম বাবুল, পরিচালক সালমা ইসলাম ও জেনারেল ম্যানেজার মো. সুরুজ রহমান শেখের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।

 মামলাটিতে বলা হয়, অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া মল্ট ও হপস সহযোগে অভিযুক্তদের প্রতিষ্ঠান হান্টার ও ক্রাউন নামে মল্ট বেভারেজ ও নন নন অ্যালকোহলিক ব্রিউনিং পদ্ধতিতে উৎপাদনের জন্য ব্রিউয়ারি স্থাপন করেছেন। তারা ওই ব্রিউয়ারি থেকে হান্টার ও ক্রাউন নামের অ্যালকোহল বাজারজাতকরণের জন্য কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় ক্রমাগত বিজ্ঞাপন প্রচার করছেন। এ কাজের ব্যাখ্যা চাওয়া হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি প্রতিষ্ঠানটি থেকে।

 মামলা দায়েরের পর সে বছরেই গাজীপুরের আদালত থেকে দ্রুত বিচারের জন্য ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে মামলাটি স্থানান্তরিত হয়।

 ২০০৪ সালের বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্ট থেকে অভিযুক্তরা জামিন নেন। সে বছরই হাইকোর্টে বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্তরা একটি রিট আবেদন করেন। এরপর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের এ মামলাটির কার্যক্রম হাইকোর্ট স্থগিত করে।

 এ ট্রাইবুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মাহফুজুর রহমান লিখন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, রিট আবেদনে বলা হয় হান্টার ও ক্রাউন পানীয়তে শতকরা ৫ ভাগের কম অ্যালকোহল রয়েছে। সে কারণে তাদের পণ্য মাদক নয়।

 আর এ মামলাটির বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে চলা এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইনে গঠন করা ট্রাইব্যুনালের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।

 পরে গত ২ আগস্ট তারিখে শুনানি শেষে ৪ আগস্ট তারিখে মামলার স্থগিতাদেশ খারিজ করে দেন হাইকোর্টের বিচারপতি মো.রুহুল কুদ্দুস এবং  ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।

 মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, অভিযুক্তদের পক্ষে হাইকোর্টে এ শুনানিতে অংশ নেন মো.জিয়াউল হক আর রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বিভূতি ভূষণ বিশ্বাস।

 পরে গত মঙ্গলবার হাইকোর্টের আদেশটি ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ফেরত আসে।

 মামলার আসামি মো. সুরোজ রহমান শেখ জামিন নিয়ে আর এ ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় তার জামিন বাতিল করা হয়।

 /টিএইচ/এসএম/টিএন/