চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকার বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে আইনি নোটিশ

চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ খ্যাত সিআরবি এলাকাকে উন্মুক্ত স্থান গণ্য করে কোনও গাছপালা ও পাহাড়-টিলা কেটে হাসপাতাল নির্মাণ না করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আইনি নোটিশ প্রেরণ করা হয়েছে।

বুধবার (১৪ জুলাই) পরিবেশ ও মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট পাঁচটি সংগঠনের পক্ষে নোটিশটি প্রেরণ করা হয়েছে। সংগঠনগুলো হলো- পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফরম এন্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), নিজেরা করি এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।

নোটিশটি রেলপথ মন্ত্রণালয় সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয় সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচিব, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, প্রধান বন সংরক্ষক, বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল)জেনারেল ম্যানেজার, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা; বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদফতরের (চট্টগ্রাম অঞ্চল) পরিচালক, কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ এন্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পাঠানো হয়েছে।
  
নোটিশে বলা হয়েছে, সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ রেলওয়ে ও বেসরকারি সংস্থা ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ এন্ড কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে ৬ একর জায়গার উপর ৫০০ শয্যা ও ১০০ আসন বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। যদিও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনাতে সিআরবি এলাকাকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং চট্টগ্রাম নগরীর সকল পাহাড়-টিলাকে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করে সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত রক্ষিত অঞ্চল হিসেবে গণ্য করেছে। চট্টগ্রামের ফুসফুসখ্যাত অপরূপ নৈসর্গিক অঞ্চল, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যকলা এবং ইতিহাস সমৃদ্ধ সিআরবি এলাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য একটি হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও আরেকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মিত হলে পাহাড়-টিলা এবং অসংখ্য গাছ কাটা পড়বে, বেশি লোক সমাগমের কারণে জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হবে। এতে সিআরবি অঞ্চল তার শত বছরের বৈশিষ্ট্য হারাবে এবং নির্জন এলাকাটি কোলাহলযুক্ত একটি ব্যস্ত অঞ্চলে পরিণত হবে।

‘এলাকাটি ছোট-বড় পাহাড়-টিলার সমন্বয়ে মোট ২১০ একর জুড়ে বিস্তৃত। কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেই নয়, এলাকাটি ঐতিহাসিক কারণেও গুরুত্বপূর্ণ । সিআরবি, সাতরাস্তার মোড় ও টাইগার পাস ঘিরে থাকা পাহাড় ও উপত্যকায় গাছপালামণ্ডিত এলাকাটিকে চট্টগ্রামের “ফুসফুস” গণ্য করা হয়। তাছাড়া এখানে রয়েছে শিরিষতলা নামে একটি প্রশস্ত মাঠ যেখানে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন ইত্যাদি ঐতিহ্যগত উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। 

নোটিশে সিআরবি এলাকাকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে গণ্য করে কোন ধরনের গাছ না কাটার জন্য অনুরোধ জানিয়ে এবং কোন পাহাড়-টিলা ও গাছপালা কেটে হাসপাতাল নির্মাণ না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এলাকাটিকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী “বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা, জাতীয় ঐতিহ্য, স্মারক বৃক্ষ এবং কুঞ্জ বন ও জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ ঐতিহ্যগত স্থান ঘোষণার এবং শতবর্ষী গাছগুলোকে স্মারক বৃক্ষ হিসেবে ঘোষণারও দাবি জানানো হয়েছে।