গাজীপুরে সুমাইয়া হত্যা: রহস্য উন্মোচনের দাবি পিবিআইয়ের

প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় কিশোরী সুমাইয়া আক্তারকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), গাজীপুর জেলা। হত্যার ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য ওই কিশোরীর মরদেহ সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় জড়িত দুজন এরই মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

পিবিআই বলছে, ২০২০ সালের ৩১ অক্টোবর গাজীপুর মহানগর কাশিমপুর থানাধীন বারেন্ডা এলাকার একটি বাসা থেকে সুমাইয়া খাতুনের (১২) মরদেহ সিলিং ফ্যানে ঝুলানো অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে জানা যায়, নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। ব্যাপারে কাশিমপুর থানায় একটি নিয়মিত হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা দেখতে পান, প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ার কারণে ক্ষোভের বশবর্তী হয় সুমাইয়া খাতুনকে ধর্ষণের পর হত্যা করে সাঈদ ইসলাম (১৯) রনি মিয়া (২১) নামে দুই কিশোর। ঘটনার পর তারা লাপাত্তা ছিলেন।

পরবর্তী সময়ে সাঈদ ইসলামকে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে রনি মিয়াকে গাইবান্ধা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই কর্মকর্তারা জানতে পারেন, আসামি রনি ভিকটিম সুমাইয়া খাতুন একই বাসায় পাশাপাশি রুমে ভাড়া থাকতেন। আবার রনির বন্ধু মিলন হাসান সাঈদ পাশাপাশি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন এবং রনিদের বাসায় চুক্তিভিত্তিক তিনবেলা খাবার খেতেন। এসময় প্রথমে মিলনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সুমাইয়ার। কিন্তু সাঈদ রনিও সুমাইয়াকে পছন্দ করত। কিন্তু সুমাইয়া তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। বিষয়টি সুমাইয়ার মা জানতে পারলে তারা বাসা বদলে অন্যত্র চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। এবং নভেম্বর মাসে অন্যত্র চলে যাবার জন্য বাসা ভাড়া নেয়। এসময় ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে ৩১ অক্টোবর ২০২০ তারিখ সকালে সাঈদ রনি সুমাইয়ার বাসায় ঢুকে তাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এবং ধর্ষণের ভিডিওচিত্র ধারণ করে।

পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা কাওছার উদ্দিন বুধবার (১৪ জুলাই) রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দে‌ওয়ার জন্য ফ্যানের সাথে সুমাইয়ার মরদেহ ঝুলিয়ে পালিয়ে যায় সাইদ রনি। ঘটনার আট মাস ১৪ দিন পর তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনার রহস্য উন্মোচনে সক্ষম হই আমরা। অভিযুক্ত আসামি রনি সাঈদকে ১৩ জুলাই  আদালতে সোপর্দ করলে তারা নিজেদের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে। এবং ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

পিবিআইয়ের গাজীপুর জেলা শাখার পুলিশ সুপার মাকছেদুর রহমান বুধবার (১৪ জুলাই) রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শুরুর দিকে ঘটনাটির কোন ক্লু ছিলো না। পরে বেশকিছু ক্লু আমরা পাই। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে অপরাধীদের শনাক্তের পাশাপাশি গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি আমরা।