শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা: দুই আসামির খালাসের আদেশ স্থগিত

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামে ৯ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। একইসঙ্গে আগামী ১ আগস্ট আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আবেদনটি শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।

খালাস স্থগিত হওয়া আসামিরা হলেন—নিহত শিশুটির মামাতো ভাই উপজেলার বুখাইতলা বান্ধবপাড়া গ্রামের মেহেদী হাসান ওরফে স্বপন (২২) ও একই গ্রামের সুমন জমাদ্দার (২০)।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানি নিয়ে সোমবার (১৯ জুলাই) বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের চেম্বর জজ আদালত এ আদেশ দেন।

আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ্।

মামলা সূত্রে জানা যায়, শিশুটি (৯) পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামের ফুল মিয়ার মেয়ে। সে একই উপজেলার বুখাইতলা-বান্ধবপাড়ায় নানা বাড়িতে থেকে স্থানীয় হাতেম আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো।

২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর সকালে গরুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য ওই বিদ্যালয়ের মাঠে যায় শিশুটি। দুপুরেও ঘরে না ফেরায় স্বজনরা তাকে খুঁজতে শুরু করেন। পরদিন দুপুরে বাড়ির পাশের একটি বাগানে তার উলঙ্গ ও ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়।

খবর পেয়ে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পিরোজপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। তদন্তে দেখা যায়, শিশুটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস এ ঘটনায় ফাতেমার মামাতো ভাই মেহেদী হাসান স্বপনের সংশ্লিষ্টতা পান। পরে মেহেদী ও তার সহযোগী সুমন জমাদ্দারকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। সুমন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, সে ও মেহেদী শিশুটিকে বাগডাসা দেখানোর লোভ দেখিয়ে বাগানে নিয়ে প্রথমে ধর্ষণ করে। বিষয়টি যাতে জানাজানি না হয় সেজন্য পরে তারা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে শিশুটিকে হত্যা করে।

রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, নিহত শিশুটির বড় বোন বিথিকে ভালোবেসে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল মেহেদী। বিথির পরিবার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে স্বজনরা মেহেদীকে অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেন। কিন্তু তাতেও বিথির প্রতি আকর্ষণ না কমায় স্ত্রীর ওপর প্রায়ই নির্যাতন করতেন তিনি। একপর্যায়ে মেহেদী তার বন্ধু সুমনকে নিয়ে ফন্দি আঁটেন যে শিশুটিকে ধর্ষণ করে হত্যা করলে স্বজনরা এ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। সে সুযোগে বিথিকে অপহরণ করে পালিয়ে যাবে সে। পরিকল্পনা অনুযায়ী শিশুটিকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়।

এরপর ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. গোলাম কিবরিয়া দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। পাশাপাশি তাদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছিল।

পরে আসামিদের আপিল এবং ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে গত ৩০ জুন হাইকোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এ এসএম আব্দুল মবিনের ভার্চুয়াল বেঞ্চ ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই জনকে খালাস দিয়ে রায় দেন। ওই রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।