বড় ভাইকে খুন করে হত্যা মামলার বাদী সাজে রিপন

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বড় ভাইকে নৃশংসভাবে খুন করে আপন ছোট ভাই। আবার সেই ছোট ভাই নিজেই হত্যা মামলা দায়ের করে। বিচার চায় বড় ভাই হত্যার। তবে তার শেষরক্ষা হয়নি। কিশোরগঞ্জ জেলা পিবিআইর তদন্তে হত্যারহস্য উদঘাটিত হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে বাদী ছোট ভাইকে।

রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কিশোরগঞ্জ জেলার পিবিআই’র পুলিশ সুপার (ইউনিট ইনচার্জ) শাহাদাত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গত ২৮ জুলাই কিশোরগঞ্জের ভৈরবে স্বপন মিয়া (৩৮) নামে এক ব্যক্তি খুন হন। একটি কালভার্টের নিচে তার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তার আপন ছোট ভাই রিপন মিয়া ভৈরব থানায় একটি হত্যা মামলা করে। প্রথমে মামলাটি ভৈরব থানা পুলিশ তদন্ত করে। গত ১ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। তদন্তের ১৫ দিনের মাথায় হত্যার সঙ্গে জড়িত মামলার বাদী ছোট ভাই রিপন মিয়াসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে রিপন মিয়া হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

ভিকটিম স্বপন মিয়া

পিবিআই জানায়, নিহত স্বপন মিয়ারা চার ভাই ও একবোন। ভাইদের মধ্যে খোকন মিয়া সবার বড়। সৌদি প্রবাসী স্বপন মিয়া স্থানীয় বাজারে চা বিক্রেতা। সেজ ভাই রিপন মিয়া। সে মালয়েশিয়ায় ছিল। ২/৩ বছর আগে রিপন মিয়া দেশে আসে। এরপর করোনার কারণে আর যাওয়া হয়নি। সবার ছোট সোহেল মিয়া বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। স্বপন মিয়া খুন হওয়ার তিন দিন পর তার ছেলের জন্ম হয়। তাই তার স্ত্রী মামলার বাদী হতে পারেননি।

যেভাবে হত্যা করা হয় স্বপনকে

স্বপন মিয়ার ছোট ভাই রিপন মিয়া নিয়মিত ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করতো। এছাড়া ভিকটিম স্বপন মিয়ার সঙ্গে তার জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল। রিপনকে নেশা করতেও স্বপন মিয়া বাধা দিতো। এতে স্বপনের ওপর ক্ষিপ্ত হয় রিপন মিয়া। এছাড়াও বাড়ির রাস্তা নির্মাণের খরচ ১৫ হাজার টাকা না দেওয়ায় স্বপন মিয়ার প্রতিশোধ নেওয়ার পথ খুঁজতে থাকে।

গত ২৫ জুলাই রাতে রিপন মিয়া তার পরিচিত আব্দুর রব, ইমান আলী, সবুজ, বুলবুল আলমকে নিয়ে স্বপন মিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

এদের মধ্যে বুলবুল চুরি, ডাকাতি, খুন ও মাদক কারবারে জড়িত। পরিকল্পনা অনুযায়ী রিপন মিয়ার দেওয়া দুইশ’ টাকায় ইমান আলী ও বুলবুল ভৈরব বাজারের বাইন্নাপট্রি থেকে এসিড কিনে আনে।

গত ২৬ জুলাই রাত ১২টার দিকে এসিডের বোতলসহ রিপন মিয়া, ইমান আলী, সবুজ, বুলবুল, আব্দুর রব ভৈরবের লতিফ মার্কেটের ভেতরে অবস্থান করে। তখন স্বপন মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে লতিফ মার্কেটের সামনে এলে তারা তাকে ঘিরে ধরে। বুলবুল ও সবুজ তাকে পিছন থেকে গামছা দিয়ে নাকেমুখে পেঁচিয়ে ধরে। ইমান আলী ও আব্দুর রব তাকে একটি গাড়িতে তোলে। গাড়িটি ছোট রাজাকাটা কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় স্বপন মিয়া চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে দৌড় দেন। তখন ইমান আলী হাতে থাকা এসিড তার নাকমুখে ছুড়ে মারে। তখন স্বপন মিয়া বাঁচার জন্য চিৎকার দিতে দিতে দৌড়ে পাশে বিলের পানিতে ঝাঁপ দেয়। তখন পানিতে মাথা চেপে ধরে স্বপন মিয়াকে হত্যা করে তারা।

পরে লাশটি বিল থেকে তুলে ৫০-৬০ গজ দূরে একটি কালভার্টের নিচে রেখে পালিয়ে যায় তারা।

এরপর ২৯ জুলাই রিপন বাদী হয়ে ভৈরব থানায় হত্যা মামলা করে।

গত ১ সেপ্টেম্বর মামলাটি কিশোরগঞ্জ জেলা পিবিআই তদন্ত শুরু করে। তদন্তের ১৫ দিনের মাথায় হত্যার রহস্য উদঘাটন করে তারা। গত শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রিপন মিয়া, আব্দুর রব, ইমান আলী ও সবুজকে গ্রেফতার করে পিবিআই টিম। তবে গাড়িচালক এখনও পলাতক।