শিশু নিলয় হত্যা: চার আসামির মৃত্যুদণ্ড কমে যাবজ্জীবন

সিরাজগঞ্জের আলোচিত আশিকুর রহমান নিলয় (৯) হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

বুধবার (৮ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।

যাবজ্জীবনের পাশাপাশি আসামিদের ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতে জেল আপিলকারী আসামি এরশাদ আলী ওরফে এরশাদ, আবুল কালাম ওরফে কালাম ও আশরাফুল ইসলাম ওরফে কানা রিন্টু ওরফে মিন্টুর পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট সারোয়ার আহমেদ। নিয়মিত আপিল দায়েরকারী আসামি নুর মোহাম্মদ ওরফে কালা চোর ওরফে কালা ডাকাতের পক্ষে মামলাটি শুনানি করেন আইনজীবী খবির উদ্দিন ভূঁইয়া। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত দেবনাথ।

রায় প্রদানের পর আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ২০০৬ সালের ১২ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জের সলংগা থানার ভরমোহনী গ্রামের জনৈক আব্দুল হালিমের ৯ বছর বয়সী শিশুপুত্র আশিকুর রহমান নিলয়কে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে শিশুটিকে ফেরত দেওয়ার কথা ঠিক হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসামিরা কথা রাখেনি। ছেলেকে ফেরত না পেয়ে ১৩ জানুয়ারি আব্দুল হালিম থানায় এজাহার দায়ের করে।

পুলিশ এজাহারনামীয় ৪ জন আসামিকে গ্রেফতার করে। আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে ১৪ জানুয়ারি জনৈক আব্দুল খালেকের বাড়ি সংলগ্ন ল্যাট্রিনের সেপটিক ট্যাংকের ভিতর থেকে শিশু নিলয়ের বস্তাবন্দি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আসামি এরশাদ আলী এবং নুর মোহাম্মদ ওরফে কালু ওরফে কালা ডাকাত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

তদন্ত শেষে পুলিশ ২০০৬ সালের ১৪ এপ্রিল চার্জশিট দাখিল করে। মামলাটি রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার হয়। বিচার শেষে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৮/৩০ ধারা এবং দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় ৪ জন আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো- এরশাদ আলী ওরফে এরশাদ, আশরাফুল ইসলাম ওরফে কানা রিন্টু ওরফে রিন্টু, আবুল কালাম ওরফে কালাম ও নুর মোহাম্মদ ওরফে কালু ওরফে কালা চোর ওরফে কালা ডাকাত।

পরে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য মামলাটি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। চার আসামির মধ্যে একজন আসামি নিয়মিত আপিল দায়ের করে এবং বাকি তিনজন জেল আপিল দায়ের করে। সবগুলো আপিল ও ডেথ রেফারেন্স একত্রে শুনানি হয়। শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগ ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখে চার আসামিকেই মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।

হাইকোর্টের রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে আপিল বিভাগে একজন আসামি নিয়মিত আপিল এবং তিনজন জেল আপিল দায়ের করেন।

ওই আপিল ও জেল আপিল শুনানি শেষে আপিল বিভাগ আজকে রায় ঘোষণা করলেন।