মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা

তাহের-ননীর ৬ অপরাধ

মো.ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীমানবতাবিরোধী অপরাধ  মামলায় নেত্রকোনার মো. ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য মঙ্গলবার দিন নির্ধারণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায়ের এ দিন ধার্য করেন। এর আগে উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ১০ জানুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনাল এই দুই আসামির বিরুদ্ধে মোট ছয়টি অভিযোগের ওপর বিচারকার্য পরিচালিত হয়েছে। ওবায়েদুল হক তাহের (৫৫) নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার ভোগাপাড়ার শুনইএলাকার মৃত মঞ্জুরুল হকের ছেলে যে নেত্রকোনা পৌর শহরের তেরীবাজারে থেকে ব্যবসা করতেন।  আরেক আসামি আতাউর রহমান ননী (৫৮) একই জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কচন্দরা এলাকার মৃত আহছান আলী ওরফে আছান আলী ওরফে হাছেন আলীর ছেলে।
অভিযোগ অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আসামিরা পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। আসামি তাহের রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হলে অন্য আসামি ননীসহ আরও অনেকে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। এরপর শহরের মোক্তার পাড়ায় মলয় বিহারী বিশ্বাসের বাড়ি দখল করে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করেন তারা। তারা ১৯৭১ সালে নেত্রকোনা জেলার সদর এলাকা ও বারোহাট্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিলেন। 

প্রথম অভিযোগ:  নির্যাতন, দেশত্যাগে বাধ্য করা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ

১৯৭১ সালের ১৭ আগস্ট তাহের ও ননীর নেতৃত্বে রাজাকাররা নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানার বাউসী বাজার থেকে ফজলুল রহমান তালুকদারকে অপহরণ করে জেলা পরিষদ ডাক বাংলোয় নির্যাতনের পর ত্রিমোহনি ব্রিজে হত্যা করেন। একই সঙ্গে ৪০০ থেকে ৪৫০টি দোকানের মালামাল লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ফজলুর রহমানকে নেত্রকোণায় নিয়ে গিয়ে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। ওই রাতে তাহেরের নেতৃত্বে ননী ও তার রাজাকার সঙ্গীরা ফজলুর রহমানকে ত্রিমহোনী ব্রিজে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে এবংলাশ নদীতে ফেলে দেন।

দ্বিতীয় অভিযোগ:  হত্যা, অপহরণ ও আটকে রেখে নির্যাতন

একাত্তরের ৪ অক্টোবর জেলার বারহাট্টা রোডের শ্রী শ্রী জিউর আখড়ার সামনে থেকে তাহের ও ননী কৃতী ফুটবলার দবির হোসেনকে অপহরণ করেন। পরে নির্যাতনের পর মোক্তারপাড়া ব্রিজে গুলিকরে হত্যা করা হয় দবিরকে।

তৃতীয় অভিযোগ: হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ ও নির্যাতন

১৯৭১ সালের ১৯ অক্টোবর তাহের ও ননীর নেতৃত্বে বারহাট্টা থানার লাউফা গ্রাম থেকে মশরফ আলী তালুকদারসহ ১০ জনকে অপহরণ করে ঠাকুরাকোনা ব্রিজে নিয়ে ৭ জনকে গুলি করে হত্যা করাহয়।

চতুর্থ অভিযোগ: নির্যাতনের মাধ্যমে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা

ননী ও তাহের মলয় বিশ্বাস ও অ্যাডভোকেট শীষ চন্দ্র সরকারের বাড়ি দখল করে মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে পরিবারসহ তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করেন।

 পঞ্চম অভিযোগ: হত্যা এবং আটকে রেখে নির্যাতন

১৫ নভেম্বর তাহের ও ননী বিরামপুর বাজার থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বদিউজ্জামান মুক্তসহ ৬ জনকে অপহরণ করে লক্ষ্মীগঞ্জ খেয়াঘাট ও মোক্তারপাড়া ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন।

 ষষ্ঠ অভিযোগ: গণহত্যা

তাহের ও ননী চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামিনী চন্দ্র চক্রবর্ত্তীসহ ২৭ জনকে নেত্রকোনা জেলগেট থেকে আটক ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেন।

/ইউআই/এমএনএইচ/