আপিল মামলার রায়ের আর মাত্র ৫ দিন

‘প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করেছেন মীর কাসেমের লবিস্ট’

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আপিলের রায়ের আগে আবারও নড়ে-চড়ে বসেছেন মীর কাসেমের লবিস্টরা। হাফিংটন পোস্টে আবারও বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ভাড়া করা লবিস্ট টবি ক্যাডম্যান মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়কে পাশ কাটিয়ে কেবল বিরোধীদলীয় নেতাদের বিচারের বিষয়টিকে বিকৃতভাবে তুলে ধরেছেন।
মীর কাসেমের মামলার আপিল শুনানিকালে প্রধান বিচারপতির তোলা কিছু প্রশ্নকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে পুরো বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা। তারা বলছেন, প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে কাজ হাসিলের চেষ্টায় আছেন ক্যাডম্যান। আর প্রসিকিউশন বলছে, রাষ্ট্রপক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ কেউ আপিল শুনানিতে অংশ নিলে হয়তো কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যেত।
টবি ক্যাডম্যানের লেখাকে ঘিরে আশঙ্কা সৃষ্টি হলেও কোনও ভাড়াটের কথায় কান না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। আর প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলছেন, আমাদের তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল সর্বোচ্চ শাস্তি দিচ্ছেন। সেটা নিয়ে আপিলে সমালোচনার ঝড় উঠছে। সেক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিরা কি বিষয়গুলো ধরতে পারেননি বলে ধরে নিতে হবে? নাকি আপিলে উপস্থাপনটা ঠিকমতো হচ্ছে না? তিনি আরও বলেন, অন্য আর দশটা ফৌজদারি মামলার চেয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলো সম্পূর্ণ আলাদা। যারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ, সেই আইনজীবীদেরই এটা উপস্থাপন করা উচিত। ফৌজদারি মামলার অভিজ্ঞতা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়।
উল্লেখ্য, ২৪ ফেব্রুয়ারি বুধবার মীর কাসেম আলীর মামলার শেষ দিনের শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে বলেছেন, ‘এ মামলা আপনারা কোনওরকম দায়সারাভাবে পরিচালনা করে যাচ্ছেন। এটি দুঃখজনক। এ মমলার তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটরকে এনে আসামির সঙ্গে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত।’

প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে টবি ক্যাডম্যান লিখেছেন, মীর কাসেমের মামলাটি দুর্বল বলে আপিল বিভাগ চিহ্নিত করেছেন। আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানির সময় যে ধরনের প্রশ্ন উঠেছে, তিনি সেগুলো নিয়ে আলাপ করে এই বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এই সেই টবি ক্যাডম্যান, যাকে জামায়াতের শীর্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধীরা লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ করেছেন বিভিন্ন সময়। এরই অংশ হিসেবে এই ব্রিটিশ আইনজীবী এদেশের আইনজীবীদের পরামর্শও দিয়ে চলেছেন। আন্তর্জাতিক যোগাযোগগুলোও সম্পন্ন করছেন।

মীর কাসেমের মামলার শুনানিতে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে আদালত প্রশ্ন করেন, প্রসিকিউশনের ডকুমেন্টে দেখা যায়, মীর কাসেম আলী ২৩ নভেম্বর ঢাকায় ছিলেন। দুটি পত্রিকায় ছাত্রসংঘের তৎকালীন সভাপতি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সাধারণ সম্পাদক মীর কাসেম আলীর যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়। একটি পত্রিকার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা ঢাকা থেকে বিবৃতি দিয়েছেন। ২৩ নভেম্বর যদি মীর কাসেম আলী ঢাকায় থাকেন, তাহলে ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম গিয়ে অপহরণ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হওয়া কী করে সম্ভব, যখন দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল একেবারেই বিধ্বস্ত। এ প্রশ্নের জবাবে তুরিন বলেন, দুই নম্বর সাক্ষী সানাউল্লাহ চৌধুরী সাক্ষ্য দিয়েছেন, ২৭ নভেম্বর বাদ মাগরিব তাকে ডালিম হোটেলে নেওয়া হয়। সেখানে জসিম ও রঞ্জিত দাসকে দেখতে পান। হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল ২৮ নভেম্বর। যদি মীর কাসেম ২৩ তারিখ ঢাকাতেও থাকেন, তাও ২৮ তারিখ তার চট্টগ্রামে থাকতে না পারার কারণ নেই।

তিনি আরও বলেন, অর্গানাইজড ক্রাইমে সবাইকে সব কাজে অংশ নিতে হবে তেমনটা নয়। কমন প্ল্যানের অধীনে যে কাজ হয়, সেটার যেকোনও পার্টে যদি অপরাধী জড়িত থাকেন, ১৯৭৩ অ্যাক্টের অধীনে তাহলেই তো তাকে দায়ী করা হবে। জসিমকে ধরার সময় মীর কাসেম ছিলেন তাতো সাক্ষী কখনও বলেননি। জসিমকে যখন অত্যাচার করে ডালিম হোটেলের ঘরে ফেলে যায় তখন মীর কাসেমের কথা সাক্ষী শুনতে পান বলে জানিয়েছেন।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, টবি ক্যাডম্যান শুরু থেকেই জামায়াতের ভাড়াটে আইনজীবী হিসেবে নানারকমভাবে এই বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছেন। আদালতে যা আলাপ হবে, সেটার পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি উপস্থাপন হয়েই থাকে। শুনানির খণ্ডিত অংশকে ব্যবহার করে চূড়ান্ত রায়ের কয়েকদিন আগে ক্যাডম্যানের এ ধরনের লেখা খুবই শঙ্কাজনক। এককথায় বিতর্ক সৃষ্টির জন্য প্রধান বিচারপতির বক্তব্যকে ব্যবহার করছেন মীর কাসেমের এই লবিস্ট।

/এমএনএইচ/আপ-এজে