শনিবার আফগান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকায় ড্রোন হামলায় তালেবান প্রধান মোল্লা আখতার মনসুর নিহত হয়েছেন। একটি গাড়িতে থাকা মনসুর ও তার এক সহযোগীকে লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ২০১১ সালে পাকিস্তানের সামরিক শহর অ্যাবোটাবাদে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন অভিযানে আল কায়েদার শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর এটিই পাকিস্তানে চালানো যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিযান।এ সম্পর্কে আগে থেকে পাকিস্তান সরকারকে কিছুই জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র। হামলার পর পাকিস্তানকে জানানো হয়েছে।
ওবামা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে যারা সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে বা পরিকল্পনা করছে, সেসব চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। একই লক্ষ্য নিয়ে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করে যাব। কিন্তু বিভিন্ন দেশে হুমকি দেওয়া সন্ত্রাসীদের কোনও স্বর্গরাজ্য করতে দেব না।
এ ড্রোন হামলাকে আফগানিস্তানে উন্নয়ন ও শান্তির আনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফল হিসেবেও উল্লেখ করেছেন ওবামা। তিনি জানান, মনসুর আফগান সরকারের নেওয়া শান্তি আলোচনাকে বারবার প্রত্যাখ্যান করেছেন। ওবামা বলেন, তালেবানদের উচিত দীর্ঘদিনের সংঘাত ভুলে শান্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আফগানিস্তানের পুনর্গঠন কাজে অংশীদার হওয়া। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আসবে।
ওবামা আরও বলেন, আমরা এমন একটি সংগঠনের নেতাকে সরিয়ে দিয়েছি যা মার্কিন ও জোট বাহিনীর সেনাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, আফগানিস্তানের নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে এবং আল-কায়েদার মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে তারা জড়িত হয়েছে।
ওবামা জানান, ২০১৫ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের সম্মুখ যুদ্ধ থেকে প্রত্যাহার করলেও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের কোনও পরিবর্তন হয়নি। তিনি বলেন, অপর দিকে, প্রধান সেনানায়ক হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব বসে না থাকা। আমরা তালেবান ও অন্যদের প্রতি স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই যে, আমরা জনগণকে নিরাপত্তা দেব। এবং এই বার্তাটিই দেওয়া হয়েছে।
তালেবানের বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি শান্তির আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে ওবামা বলেছেন, আলোচনাই একমাত্র শান্তির পথ।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, এক সপ্তাহ আগে প্রেসিডেন্ট ওবামা মোল্লা মনসুরের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলার অনুমতি দেন। পাকিস্তান, চীন, আফগানিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি আলোচনার ধারাবাহিক উদ্যোগের পরও মোল্লা মনসুর হামলা জোরদার করায় তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে, নিজ দেশের অভ্যন্তরে ড্রোন হামলা চালিয়ে আফগান তালেবান প্রধান মনসুর নিহতের ঘটনায় পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। মার্কিন হামলায় পাকিস্তান উদ্বিগ্ন বলেও দাবি করেছেন কয়েকজন কর্মকর্তা। এতে পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেরও অবনতি হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।
পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানান, তালেবান নেতাদের ওপর হামলা চালানো হবে না বলে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। শান্তি আলোচনার জন্যই মনসুরসহ তালেবানদের নেতাদের চলাফেরা করতে দেওয়া হচ্ছিল।
তবে শনিবারের হামলার আগেও পাকিস্তানের আফগান সীমান্তের কাছাকাছি উপজাতি অঞ্চলে কয়েকশ ড্রোন হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এসব হামলার প্রতিবাদের পরিবর্তে নীরব ছিল ইসলামাবাদ।
অপরদিকে, মনসুর নিহত হওয়ার খবরে তালেবানের সর্বোচ্চ পরিষদ সোমবারও দ্বিতীয় দিনের মতো বৈঠক করেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবানের পক্ষ থেকে মনসুরের নিহত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করা হয়নি। তালেবানের এক শীর্ষনেতা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, মনুসর নিহত হওয়ার খবরে তালেবান নেতাদের মধ্যে ড্রোন হামলার আতঙ্ক কাজ করছে। অনেকেই পাকিস্তানে আত্মগোপনে চলে গেছেন। বেশির ভাগ নেতাই আফগানিস্তানে পালিয়েছেন। তিনি বলেন, রাহবারি শুরা (সর্বোচ্চ পরিষদ) পরিষদের বৈঠক চলছে অজ্ঞাতস্থানে। যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলার আশঙ্কায় নেতারা এক স্থানে অবস্থান করছেন না।
আরও পড়ুন:
- ১৪০০ কিলোমিটার রাস্তায় যুক্ত হচ্ছে ভারত-থাইল্যান্ড-মিয়ানমার
- কেনিয়ায় নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ, নিহত ৩
- তুরস্ক, কাতার, সৌদি আরব বোমা হামলায় জড়িত: সিরিয়ার দাবি
/এএ/