গল্পটি বন্ধু দিবসের

জাতিসংঘ ঘোষিত প্রথম বন্ধু দিবসের প্রতীক

অগাস্ট মাসের প্রথম রবিবার দিনটি আমাদের অনেকের কাছেই ‘বন্ধু দিবস’ হিসেবে পরিচিত এবং প্রিয়। দিনটি ঘিরে অনেকেরই থাকে নানা ধরনের পরিকল্পনা। বেশ ঘটা করে উদযাপনও করা দিনটিকে।

কিন্তু কখনও ভেবে দেখা হয়েছে কী- ঠিক কীভাবে এল এই বন্ধু দিবস? বন্ধু দিবসের কোনও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি রয়েছে কিনা? আর অগাস্ট মাসের প্রথম রবিবারেই কেন বন্ধু দিবস পালিত হয়?

না ভেবে থাকলেও ক্ষতি নেই, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অন্যতম বন্ধু ‘ইন্টারনেট’-এর বদৌলতে উপরের প্রতিটি প্রশ্নেরই জবাব জানা সম্ভব হয়েছে। চলুন এক নজরে জেনে নেওয়া যাক বন্ধু দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে-

বন্ধুত্বের টান থেকে নয় উল্টো বলা চলে বাণিজ্যিক উদ্যেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ‘বন্ধু দিবস’ পালনের প্রথা প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৩০ সালে। সে সময় ২ অগাস্টকে বন্ধু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে, ঐ দিনটিতে নিজ নিজ বন্ধুদের শুভেচ্ছা কার্ড, ফুল ও উপহার দেওয়ার জন্য মার্কিন জনসাধারণের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন হলমার্ক কার্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার হাওয়ার্ড হল। আর এই সম্পূর্ণ বিষয়টির প্রচারণার দায়িত্ব নিয়েছিল দেশটির ‘গ্রিটিং কার্ড ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন’। কিন্তু ক্রেতার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছিল বাণিজ্যিক উদ্যেশ্যে গড়ে তোলা ঐ ‘বন্ধু দিবস’ প্রথা।

পরবর্তীকালে ১৯৩৫ সালে দ্য ইউনাইটেড স্টেটস কংগ্রেস অগাস্ট মাসের প্রথম রবিবারকে ‘জাতীয় বন্ধু দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। যুক্তরাষ্ট্রে ‘জাতীয় বন্ধু দিবস’ পালনের প্রথা শুরু হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে বিষয়টি পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং ঐ রাষ্ট্রগুলোতেও বন্ধু দিবস পালিত হওয়া শুরু হয়। এ ধরনের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি রাষ্ট্র হচ্ছে প্যারাগুয়ে। বন্ধু দিবসকে শুধু জাতীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না রেখে আন্তর্জাতিক পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রথম প্রস্তাবটিও রাখা হয়েছিল প্যারাগুয়েতেই। মজার বিষয় হচ্ছে, প্যারাগুয়ের রাজধানী থেকে ২০০ মাইল দূরের পূয়ের্তো পিনাস্কো শহরে বন্ধুদের নিয়ে আয়োজিত সাদামাটা এক ডিনার পার্টিতে বিশেষ এই প্রস্তাবটি রেখেছিলেন ড. আর্টেমিও ব্রাকো।

বিষয়টি অবশ্য ততদিনে এমনিতেও বেশ ছড়িয়ে পড়েছিল। মার্কিন মুল্লুক এবং ইউরোপিয়ান মহাদেশ বাদেও অসংখ্য দেশে পালিত হচ্ছিল বন্ধু দিবস। অনেক দেশ আবার নিজেদের মতো করে বন্ধু দিবসের দিনও নির্ধারণ করে নিয়েছিল এবং এখনও তাদের নিজস্ব নির্ধারিত দিনেই ‘বন্ধু দিবস’ পালিত হয়।

বন্ধু দিবসের এই ছড়িয়ে পড়া এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠা থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারেনি খোদ জাতিসংঘ। ১৯৯৭, মতভেদে ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব কফি আনান-এর স্ত্রী ন্যানে আনান ‘উইনি দ্য পুহ্’-কে বন্ধুত্বের বৈশ্বিক প্রতিনিধি হিসেবে ঘোষণা করেন। পরে ২০১১ সালের ২৭ জুলাই জাতিসংঘের জেনারেল অ্যাসেম্বলি-তে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় প্রতি বছরের ৩০ জুলাই তারিখটি ‘আন্তর্জাতিক বন্ধু দিবস’ হিসেবে গণ্য হবে।                   এখনও বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রে অগাস্ট মাসের প্রথম রবিবার ‘বন্ধু দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। অনেকে রাষ্ট্র আবার জাতিসংঘ ঘোষিত তারিখেই বন্ধু দিবস পালন করে থাকে। আমাদের দেশে যেহেতু আজ বন্ধু দিবস, তাই আপনাকে বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা।

সূত্র- উইকিপিডিয়া, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও হলিডে নিউজ।

/এফএএন/