সংক্রান্তি পাতে তিতা-মিঠা

17916717_10203165301811144_1725822019_o

 

দেখতে দেখতে বছর শেষ, আবার নতুনের আবাহন। বৈশাখকে বরণ করে নিতে ব্যস্ত গোটা দেশ। আজ ফুল বিজুর মধ্য দিয়ে পাহাড়ে বর্ষবরণের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কাল চৈত্র সংক্রান্তি। বছরের শেষ দিন শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি উদযাপিত হয়। নানা পদের খাবার তৈরি করে বছরকে বিদায় দেন গ্রাম-বাংলার নারীরা। চৈত্র সংক্রান্তিতে কী কী রান্না হয় এই বাংলায় তারই একটি তালিকা বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য।

তিতকুটে পাট শাকের ঝুড়ি, সঙ্গে কাঁচা সরিষার ভর্তা, ধোয়া ওঠা লালচে আউশ  চালের ভাত আর ডালায় রাখা শুকনো মরিচ ভাজা। চৈত্রের শেষদিন নাকি তিতকুটে আর ভর্তা খেতে হয়। এতে সমস্ত রোগ বালাই বৈশাখের প্রথম ঝড়ের সাথে নাকি চলে যাবে।

রসনা বিলাসী বাঙালি কত রকমের যে খাওয়া দাওয়ার বাহার! সেই বহুকাল আগে মোগল সাম্রাজ্য থেকে আসা মোরগ মোসাল্লাম, কাবাব, টিকিয়া,  বাদাম পোলাউ বাদ দিলে যে আমাদের ভাণ্ডারে খাবারের অভাব পড়বে এমন ভাবনাটা ভাবাই ভুল।

এক শাকপাতা দিয়েই যে বারো পদের খাবার বানানো যায় সেটা শুধু আমাদের মা, খালা, দাদী-নানীরাই জানেন।

17901984_10203165310451360_1120600744_o

চৈত্রের শেষ দিন মেয়ে জামাইদের ডেকে খাওয়ান শ্বাশুড়িরা। সেঁচি শাক ভাজি, তিত করল্যার ফোড়ন, সজনে ডাল, খাল সেঁচা ছোট মাছের পেষা ভর্তা, পাট শাক ও ডালের চচ্চড়ি,  টালা টমেটোর চাটনি,  শুঁটকির ঝাল ভুনা, লাউ, ইচা মাছের বড়া, আলু কচু বেগুন টমেটো কপির নিরামিষ সঙ্গে পাঁচ ফোড়ঁনের বাগাড়। মাংস বা মাছের মাথা হরেক বাহার থাকবে না। এত গেলো কেবল দুপুরের ভাত খাওয়ার। সকালেই সব বাড়ি থেকে ভেসে আসবে ঢেকির ধুপ ধাপ শব্দ। চাল, গম, কালো জিরা, তিল, তিসি সব দিয়ে ছাতু করা হচ্ছে। কেউ কেউ এই ছাতু রসুন পেয়াঁজ আদা দিয়ে মেখে নেয় নয়তো আখের গুড় দিয়ে মেখে মুঠি করে। এর পর কাঁঠাল পাতায় নয়তো বা কচু পাতায় খেতে দিবে। থালা বাটির বালাই নেই। সে গ্রামের চেয়ারম্যান হোক আর নতুন জামাই হোক কিংবা হোক না কুটুম বাড়ি লোক সকালে এই ছাতু কাঁঠাল পাতায় নয় কচু পাতায় খেতে হবে আর গ্লাস ভরা ডাবের পানি। সব বাড়িতে অবশ্য ডাবের পানি হয় না। কোথাও কাঁচা আমের শরবতও মিলে। তবে টকটা অনেকেই  সকালে খেতে চায় না বলে সেটি দুপুরে ভাতের আগে পরে দেয়া হয়। আর সকালে আখের গুড়ের চা নয় বেলের শরবত দেয়।

17902762_10203165310611364_62817400_o

শহরের মানুষ ভেবেই অবাক হবে যে এত শত পদ রান্না করতে না জানি কত দিন লেগেছে। কিন্তু এত সহজ পদ্ধতি আর এত দ্রুত এগুলো করা হয় যে চাল বেলা চার রকমের খাবারের ব্যাবস্থা করা হয়। বিকেল বেলা কাঁঠালের মুঞ্জি, কড়া আম, লেবু পাতা, ধনে ছেচা ভর্তা,  

রাতে পাবেন বড় মাছের ঝোল দিয়ে আতপ চালের ভাত। কেউ সর্ষে সজনা করবে নয়তো বা সর্ষে কুমড়ো। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষেরা মাছের ঝোলে কুমড়ো বড়ি দেয় আর উত্তরাঞ্চলের মানুষেরা করে সেঁদল ভর্তা।

যে কোনও আয়োজনে শুঁটকি না থাকাটাই কেমন যেনো। শুঁটকির ঝোল খায় চট্রগ্রামে। শিমের বিচি দিয়ে শুঁটকি আর টমেটো দিয়ে ঝাল ঝোলের নাম খাইস্যা। আর বিল সেচা মাছ দিয়ে নিজেরা শুঁটকি করে উত্তরাঞ্চলের মানুষেরা। সেই টাকির ভর্তা, পাঠায় পেষা ভর্তা, শাক আলু দিয়ে চচ্চড়ি, মাছ শুটকির দোমাছা আরো কত রকমের রান্না।

রংপুরের কিন্তু শেলকা বানানোই হবে বিশেষ কোনো আয়োজনে।পাট শাকের ঝাল ঝোল এই রান্নাটা খুব জনপ্রিয়। আর সিলেটে হবে টক তৈকর টক ফল দিয়ে তাজা ছোট মাছের ঝোল।

আর মিষ্টিতে থাকবে নাড়ু, নারকেল, তিল, তিসি কিংবা ছাতুর নাড়ু হবে মিষ্টিতে। রসগোল্লা, বাতাসা, কদমা বৈশাখের দিনের খাবার। বছরের শেষ দিনে ঘরে তৈরি মিষ্টিতেই ভরসা। কোথাও নারকেলের চিড়া করা হয়।

/এফএএন/