সুন্দরবনের অধিকাংশ গাছই চির সবুজ ম্যানগ্রোভ শ্রেণির। এ বনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী ৷ধারনা করা হয় এ গাছের নামেই সুন্দরবনের নামকরণ করা হয়েছে। সুন্দরী ছাড়াও গরান, গেওয়া, গোলপাতা, পশুর, কেওড়া, ধুন্দল, বাইন, কাঁকড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৩৩৪টি উদ্ভিদ রয়েছে সুন্দরবনে। সারা পৃথিবীজুড়ে যে ৫০ প্রজাতির ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ আছে, তার ৩৫ প্রজাতিই পাওয়া যায় সুন্দরবনে।
সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত প্রধান প্রধান নদীগুলো হলো- পশুর, শিবসা, বলেশ্বর, রায়মঙ্গল। সুন্দরবনে নদী ছাড়াও শত শত খাল জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে পুরো বন জুড়েই।
সুন্দরবনের মূল রূপ ও রহস্য হচ্ছে জোয়ার আর ভাঁটায়। সুন্দরবনে জোয়ার ভাটার খেলা চলে প্রতিনিয়ত। জোয়ার ভাটার কারনেই একটু পর পর সুন্দরবনের চেহারা বদলে যায়। যে খাল আপনি এখন দেখবেন পানিতে ভরপুর একটু পরেই আবার সেই খালেই দেখবেন পানি নেই আছে শুধুই কাঁদামাটি।
সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণী হচ্ছে বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, বানর, শুকর, কুমির, ডলফিন, গুইসাপ, কিং কোবরাসহ আরোও বেশ কয়েক প্রজাতির সাপ, কচ্ছপ, বনমোরগ-মুরগি, ভোদর, বাদুড়, কাঠবিড়ালি, হাস পাখি, গাংচিল, বক, মদনটাক, চখা, ঈগল, চিল, শকুন ও বিভিন্ন ধরনের মাছরাঙা।
সুন্দরবনের প্রায় সব জায়গায় সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বানর। সুন্দরবনের দুষ্টু বানরের দুষ্টামি, চঞ্চলতা, ক্ষিপ্রতা পর্যটকদের খুব সহজেই মুগ্ধ করে। সুন্দরবনের বানরগুলো আকারে খুব বেশি বড় হয় না।
সুন্দরবনের সংলগ্ন বেশিরভাগ মানুষের জীবন ও জীবিকা সুন্দরবনকে ঘিরেই। এ বনের কাঠ, মধু, গোলপাতা, মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি, চিংড়ির পোনা ও নানা প্রকার সম্পদের ওপর হাজার হাজার বাওয়ালী, মৌয়ালী ও জেলেদের জীবন ও জীবিকা নির্ভর করে।
সুন্দরবন মৎস্য সম্পদেরও এক বিরাট আধার। ইলিশ, লইট্টা, ছুরি, পোয়া, রূপচাঁদা, ভেটকি, পারসে, গলদা, বাগদা, চিতরাসহ আরও নানা ধরনের মাছ পাওয়া যায় এই সুন্দরবনে।
সুন্দরবনে পূর্নিমা ও অমাবস্যা রাতের সৌন্দর্যের কথা বলে শেষ করা যাবে না। চাঁদনি রাতে চাঁদের আলো যখন বনের ওপর ছড়িয়ে পড়ে তখন হালকা আলোয় বনের গাছগাছালির সৌন্দর্য তুলনাহীন। আর অমাবস্যার রাতে বনের নীরবতা উপভোগ করা যায়। অমাবস্যার রাতে সুন্দরবনের বৃক্ষের ওপর জোনাকি পোকার আলো ছড়ানোর দৃশ্য সত্যিই অপুর্ব সুন্দর।
সৌন্দর্য যেমন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে মুগ্ধ করে তেমনি এর বহুমাত্রিক সম্পদও রয়েছে। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে প্রত্যেক বছরে সুন্দরবন থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয় সরকারের।
সুন্দরবনে যেমন সৌন্দর্য আছে, রহস্য আছে, তেমনি আছে ভয়, আর তার সাথে আতঙ্ক।‘জলে কুমির ডাঙায় বাঘ’ কথাটা সুন্দরবনের ক্ষেত্রে শতভাগ সত্য। তাই সুন্দরবনে বেড়াতে গেলে নদী দেখে সাঁতার কাটার ইচ্ছা করলে ভুলেও নদীতে নামবেন না।
আর সব সময় মনে রাখবেন ‘এই সুন্দরবন আমাদের, এই বনকে নষ্ট করলে আমাদেরই ক্ষতি হবে, বনের কোন গাছ-পালার কোনো ডাল ভাঙ্গা যাবেনা, বনের কোনো পশু-পাখিকে বিরক্ত বা ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ করা যাবে না।
ছবি- লেখক।
/এফএএন/