ঈদে আনন্দে নেই ‘হকার’

18405504_10203455577667859_1491755324_o

 

ঈদের কেনাকাটার বেশ বড় একটি অংশ জুড়ে থাকেন ভ্রাম্যমান হকার। ক্রেতারা হকারদের পসরা থেকে বেছে নেন টুকিটাকি জিনিস। আবার অনেক ক্রেতার পুরো ঈদ উদযাপনেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই হকাররা। এভাবে ব্যবসায়ের মাধ্যমে নিজেরাও ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নেন তারা। কিন্তু প্রচলিত এ বাজার চিত্রপট এবার অনেকটাই ভিন্ন।

রাজধানীর অধিকাংশ স্থানেই বসতে দেওয়া হচ্ছে না হকারদের। এ তালিকা থেকে বাদ পড়েননি উত্তরার আজমপুরের হকাররাও। ঈদ উপলক্ষে বিক্রির জন্য পণ্য কিনেও ঠিকমতো রাস্তায় বসতে পারছেন না তারা। ‘অন্যান্যবারের চেয়েও এবার বেশি মাত্রায় চাঁদাবাজির শিকার হতে হচ্ছে, এ ছাড়াও সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতে হচ্ছে কখন পুলিশ উঠিয়ে দেয়, মাঝেমধ্যে দিনে ২/৩ বারও উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন ভ্রাম্যমান পোশাক বিক্রেতা মো. ইয়াকুব আলী।

বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য অনেক হকারই ভয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন হকার জানিয়েছেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও ঈদের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তারা, কিন্তু রোজার শুরু থেকেই বসতে পারছেন না ঠিকমতো, অনেকক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতনেরও শিকার হতে হচ্ছে। ফলে সীমিত সংখ্যক পণ্য নিয়েই বসতে হচ্ছে। এতে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না।’ এরকম অবস্থায় পরিবারের সঙ্গে নিজেদের ঈদ উদযাপনের বিষয়টি নিয়েও হকাররা বেশ উদ্বিগ্ন বলেই জানান তিনি।

তারপরেও জুতা, ব্যাগ থেকে শুরু করে নারী, শিশু ও পুরুষদের প্রায় সবরকম পোশাক নিয়েই ক্রেতাদের জন্য রাস্তায় নেমেছেন হকাররা। ১০০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৯৫০ টাকার মধ্যেই এসব পণ্য বিক্রি করছেন তারা। এর মধ্যে পুরুষদের প্যান্ট এবং শিশুদের পোশাক তুলনামুলকভাবে বেশি বিক্রি হচ্ছে বলেই জানিয়েছেন ভ্রাম্যমান এই হকাররা। কিন্তু হকারদের সীমিত সংগ্রহ দেখে অধিকাংশ ক্রেতাই কিছু কিনছেন না। এ প্রসঙ্গে পণ্য দেখতে আসা ক্রেতা জহিরুল ইসলাম জানান, ‘অন্যান্যবার স্বল্প দামে অনেক কিছুই পাওয়া যায় হকারদের কাছে, কিন্তু এবার কেনার মতো তেমন কিছু পাচ্ছি না।’ সবমিলিয়ে এবারের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ হকাররাও। উচ্ছেদের জন্য অনেক হকারই দায়ী করেছেন শপিং কমপ্লেক্স মালিকপক্ষকে।

রোজার শেষ দিকে বিক্রি বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও সেটিতেও তেমন কোনও পরিবর্তন আসেনি। ইতোমধ্যে কেনাকাটা শেষে ঢাকা ছাড়ছেন অনেকেই। কিন্তু হকারদের কোনও পরিবর্তন নেই।

ঢাকা কলেজের উলটো পাশে নুরজাহান মার্কেটের সামনের পালাজ্জো বিক্রেতা সোহেল এখন কাঁধে পণ্য নিয়ে ফেরি করছেন। তিনি জানালেন, বসার ও পোশাক ডিসপ্লে করার সুযোগ থাকলে দিনে ৭০ এর বেশি পালাজ্জো বিক্রি করতেন তিনি। এখন গড়ে ১০/১২টা বিক্রি হয়, এর মধ্যে পুলিশের তাড়া, ব্যাগে নিয়ে ঘোরার কারণে কাপড়ে ভাজ পরে যাচ্ছে। নারী ক্রেতারা ভাঁজ পরা কাপড় নিতে চান না পুরানো মনে করে।

19401458_10203455577987867_879783990_oশিশুপণ্য বিক্রেতা হাসান জানালেন, এবার সল্প দামে নূরজাহান মার্কেটের একটি দোকানে কাপড় দিয়ে দিয়েছেন। আজকে কাপড় দিতেই এসেছিলেন। এতে তার একদম লাভ থাকছে না। কিছু বাড়তি কাপড় ছিল সেগুলিই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফেরি করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তেমন একটা লাভ হচ্ছে না। এবার ঈদে বাড়ি যাওয়া নাও হতে পারে বলে জানালেন হাসান।

ধানমন্ডি হকার্সে কেনাকাটা করতে আসা সুরাইয়া খানম হকার খুঁজছিলেন। মেয়েদের জামা কেনা হয়েছে, সেমিজ ও পালাজ্জোর জন্য যে লোকটি বসে তাকে খুঁজছিলেন। তিনি জানান, হাঁটাচলার সুবিধা হয়েছে কিন্তু টুকিটাকি জিনিসপত্র কেনাকাটায় বেশি অসুবিধা হচ্ছে। মেয়ের চুলের ক্লিপগুলো হকারদের থেকেই কিনতেন এতে দাম কম পড়তো।

এদিকে হকার্স মার্কেট নিয়ে অভিযোগ করলেন, বঙ্গবাজারের বেল্ট ব্যবসায়ী কামরুল। তিনি বলেন, হকারদের জন্য মার্কেট করে দেওয়া হলেও সেটিতে কোনও বরাদ্দ নেওয়ার সুযোগ ঘটেনি। গত ১১ বছর ধরে ফুটপাতেই বেল্ট বিক্রি করছেন তিনি। হকার্সের দোকান কাদের জানতে চাইলে বলেব, এইগুলো সব নেতাদের।

/এফএএন/