সংস্কারের পর নতুন রূপে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার

Naogaon picture-6বাংলাদেশে অবস্থিত প্রত্নস্থলগুলোর মধ্যে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারটি অন্যতম। এই ঐতিহাসিক বিহারটি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এর আদি নাম সোমপুর বিহার। এ বিহারটি বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও ঐতিহাসিক বিহার। হাজাও বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর বিহারটি আরও আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে সংস্কার, সংরক্ষণ ও পিকনিক কর্নারসহ নানামূখী উন্নয়নমূলক কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

সংস্কারের  মধ্যে রয়েছে সৌন্দর্য বর্ধনশীল ও আকর্ষণীয় মূল প্রবেশ দ্বার। প্রবেশ দ্বারের দক্ষিণ পাশের প্রত্নসামগ্রী ও বই রাখার ঘর, উত্তর পাশে টিকিট কাউন্টার ও মহিলা এবং পুরুষ টয়লেট। নির্মান করা হয়েছে একটি মসজিদ, অফিসার্স কোয়ার্টার ব্যাটেলিয়ানদের জন্য আনসার কোয়ার্টার, স্টাফ কোয়ার্টার, ১০টি দর্শনার্থী ছাউনী। এই ছাউনীগুলিতে পিকনিকসহ দর্শনার্থীরা বসে বিশ্রাম নিতে পারবেন। ছাউনিগুলোর পাশেই রয়েছে পুরাতন আদলে নির্মিত একটি পুকুর। এছাড়া পাথরের মনোরোম পরিবেশে নির্মান করা হয়েছে একটি বসার স্থান। রয়েছে গাড়ী পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। সাউথ এশিয়া টুরিজম ইনফ্র্যাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের অধীনে এই কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে পিকনিক কর্নার থেকে সরাসরি বৌদ্ধমন্দির প্রবেশ পথে নির্মান করা হয়েছে একটি ব্রিজ।পুরাতন আদলে মন্দিরের সংস্কার কাজ করা হয়েছে। বৌদ্ধ মন্দিরের চতুর্দিকে ভিক্ষুক কক্ষ, পঞ্চবেদীসহ সকল স্ট্রাকচারের সংস্কার করা হয়েছে। সংস্কারের ফলে পাহাড়পুর শুধু দর্শনীয় এবং অতীত ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবেই নয় ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিশেষ স্থান হিসেবেও দেশে-বিদেশে ইতিমধ্যে খ্যাতি পেতে শুরু করেছে।Naogaon picture-1

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড়পুরের বৌদ্ধ বিহারের নকশা সবচেয়ে সেরা। কারও কারও মতে এখানে একটি জৈন মন্দির ছিল। আর সেই মন্দিরের উপরেই গড়ে তোলা হয়েছে এ বিহার। এ বিহারের ১৩-১৪ ফুট আকারের মোট ১৭৭টি ঘর রয়েছে। ঘরগুলোর সামনে টানা বারান্দা। উপরে প্রায় ১০ ফুট চওড়া ছাদ। ঐগুলোতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বাস করতেন। বিহারের ঠিক মাঝখানে রয়েছে একটি মন্দির। মন্দিরটির দৈর্ঘ্য ৪০০ ফুট এবং প্রস্থে প্রায় ৩৫০ ফুট, উচ্চতা ৭০ ফুট। কালের পরিক্রমায় মন্দিরের সবচেয়ে উপরের অংশ ধ্বসে গেছে। এছাড়া আশে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কিছু স্থাপত্যের নিদর্শন। এখানে এক সময় যে নদী ছিল তার চিহ্ন দেখলেই বোঝা যায়। নদীর ঘাটটি সম্পর্কে এলাকায় জনশ্রুতি আছে। এই ঘাটে মৈদলন রাজার কন্যা সন্ধ্যাবতী স্নান করতো বলে এ ঘাটের নাম ছিল সন্ধ্যাবতীর ঘাট। একদিন নদীর স্রোতে ভেসে আসা জবা ফুলে ঘ্রান নেয়ার পরে সন্ধ্যাবতী গর্ভবতী হয় এবং পরবর্তীতে ছেলে সন্তান প্রসব করেন।

পাহাড়পুরে বেড়াতে আসা দর্শনার্থী শাকিলা বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও ঐতিহাসিক বিহারটি এত সুন্দর এখানে না আসলে বুঝতে পারতাম না।

রাশিয়া থেকে আগত দর্শানার্থী ড্যানিও বলেন, আমি গুগলে জানতে পেরে ঐতিহাসিক বিহারটি দেখতে এসেছি। এখানকার পরিবেশ এক কথায় চমৎকার। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত নয় বলে তিনি আক্ষেপ করেন।

Naogaon picture-8

পাহাড়পুরে গেটে কথা হয় নয়ন গিফট কর্নার এর পরিচালক রবিউল হোসেন নয়ন এর সাথে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখানে প্রতিদিন হাজার-হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক আসে। পর্যটকরা মূলত কিনতে চায় পাহাড়পুরে ইতিহাস সমৃদ্ধ বই। কিন্তু দুঃখের বিষয় পাহাড়পুর নিয়ে তেমন কোন ভাল মানের বই নেই। বিদেশি পর্যটকরা ইংরেজি বই চায় আমরা দিতে পারি না। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন,যদি বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পাহাড়পুরের ইতিহাস নিয়ে বই ছাপানো হয় তাহলে পর্যটকরা উপকৃত হবে।Naogaon picture-3

পাহাড়পুর যাদুঘরের কাস্টডিয়ান ছাদেকুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পুরাতন আদলে ও আধুনিকায়নভাবে সংষ্কার করা হয়েছে এই ঐতিহাসিক বৌদ্ধবিহারটি। নতুন করে সংস্কারের ফলে এই বিহারের ভেতর আর বৃষ্টির পানি প্রবেশ করতে পারবেনা। ফলে দেওয়াল নষ্ট হওয়ার কোনও সম্ভবনা থাকবে না।

Naogaon picture-4

/এফএএন/