বনসাই মেলায় একদিন

 

IMG_20170813_125522সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই প্রকৃতি ও মানুষের সাথে রয়েছে গভীর মিতালী ও পারস্পারিক নির্ভরতার এক নিবিড় সম্পর্ক। মানুষ প্রকৃতিকে ভালোবেসে প্রকৃতির মাঝেই বসবাস করে। আবার নির্ভরতার সম্পর্ক থাকলেও এই মানুষই সভ্যতার নামে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে। তবে কিছু মানুষ অকৃত্রিম ভালোবেসে সবসময়ই প্রকৃতির স্বাভাবিকতা রক্ষায় আন্দোলন করে যাচ্ছে।

প্রকৃতির অন্যতম সেরা উপাদান বৃক্ষরাজি। অক্সিজেন, ফুল, ফল, সবুজ আবরন দিয়ে প্রাণিজগতের পরম বন্ধু হয়ে আছে গাছ। কিন্তু দ্রুত নগরায়নের স্রোতে আজকাল সবুজ শ্যামল বৃক্ষ বিপন্ন প্রায়। তবু মানুষ বৃক্ষের বিলুপ্তি রোধে চালিয়ে যাচ্ছে প্রানান্ত প্রচেষ্টা। প্রকৃতির প্রতি, গাছপালার প্রতি মানুষের হৃদয় নিঙড়ানো ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো বনসাই।IMG_20170813_123615_BURST001_COVER

বাংলাদেশে বনসাই প্রেমীদের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম ‘বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটি(বিবিএস)’। বাংলাদেশে বনসাইয়ের প্রচার ও প্রসারের জন্য কয়েকজন শিল্পী মিলে গড়ে তোলেন এই সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নিয়মিত প্রদর্শনী ও বনসাই প্রশিক্ষণ আয়োজন করে আসছে বিবিএস। নিয়মিত বাৎসরিক আয়োজনের অংশ হিসেবে  উইমেন ভলেন্টিয়ারি এসোসিয়েশন(ডব্লিউ,ভি,এ) অডিটোরিয়ামে আয়োজন করা হয় চার দিনব্যাপি ১৯তম বনসাই প্রদর্শনী।IMG_20170813_125238

প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি হিসেবে  উপস্থিত ছিলেন "নিজেরা করি" এর সমন্বয়কারী খুশি কবির এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম। এছাড়াও "গেস্ট অফ অনার" হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রকৃতি ও পরিবেশ গবেষক অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিক। বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনিসুল হক বলেন, এবারের প্রদর্শনীর মূল লক্ষ্য ছিলো বর্ষার সজীব-সতেজ-সবুজ বনসাই শহরের মানুষের কাছে তুলে ধরা। যদিও বনসাই খুব ছোটো পাতার এবং দীর্ঘদিন বাঁচে এমন গাছ দিয়ে করা হয়। তবুও আমাদের চেষ্টা থাকে বিলুপ্ত প্রায় দেশি গাছগুলো সংরক্ষণ করে রাখা। যেমন- আমাদের দেশি বৈঁচি, তমাল, খয়ের, জঙ্গলী জাম, কর্পুর, নিশিন্দা এর মতো গাছও আমাদের সংগ্রহে রয়েছে। যে কেউ চাইলে সেসব গাছের বীজ জমিতে রোপনের জন্যও আমরা সরবারহ করতে পারবো। প্রদর্শনীতে গিয়ে দেখা যায় আমাদের চেনা বট, পাকুর, তেঁতুল, হিজল, অর্জুন, কামিনীসহ নানা বিদেশি জাতের প্রায় একহাজার বনসাঁই প্রদর্শিত হয়। যা দর্শনার্থীদের এক নৈঃস্বর্গিক সৌন্দর্যে পরিভ্রমণ করায়।IMG_20170813_125648

এবারের প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ও বিক্রি নিয়ে আয়োজকরা বেশ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। প্রদর্শনীতে আসা দর্শনার্থী আফসানা আফরিন বলেন, বনসাই এর প্রতি বিশেষ দুর্বলতা থেকে এখানে আসা। সবুজহীন ইট পাথরের এই শহরে এরকম একটি আয়েজন সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি সরকারি বেসরকারি ব্যবস্থপনায় বনসাই শিল্পের আরো পৃষ্ঠপোষকতা দাবি করেন। বিশেষ করে সৌখিন বনসাই প্রেমীদের শেখার জন্য বেশি বেশি আয়োজনের পক্ষে মত দেন তিনি।IMG_20170813_125825

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটির সহ- সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ধানমন্ডি ৯ নম্বর সড়কে, বাড়ি নং-৭১ এ আমাদের নিয়মিত প্রশিক্ষন কোর্স রয়েছে। এখানে মাত্র চার হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হয়ে দুই থেকে আড়াই মাসে যে কেউ বনসাই সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। এছাড়া বাৎসরিক দুই হাজার টাকা ফিস প্রদানের মাধ্যমে সদস্য হওয়া যায়। সদস্য হওয়ার মাধ্যমে একজন একজন শিল্পীর কর্ম বিবিএস এর প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়।IMG_20170813_125247দেশ বনসাই সোসাইটির অন্যতম শিল্পী বোরহান হোসেন বলেন, বনসাই কেবলমাত্র একটি বিনোদন মাধ্যম নয়, এটা মানুষের মনের স্বতঃস্ফূর্ততা এনে দেয়। বনসাই শিল্পরত ব্যক্তির মন থেকে দূর হয়ে যায় সমস্ত জটিলতা, সংকীর্নতা। বনসাই মানুষকে প্রেরণা জোগায়, আত্মিক শক্তি বাড়িয়ে তোলে এবং হৃদয়ের সুপ্ত সত্ত্বা জাগ্রত করে। তাই বনসাইয়ের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত।

/এফএএন/