উত্তরায় বর্ণিল পূজামণ্ডপ

012পূজার আনন্দে বর্ণিল সাজে আগেই সেজেছে রাজধানীর পূজা মণ্ডপগুলো। এর ব্যতিক্রম হয়নি উত্তরাতেও। বিশেষ করে সপ্তমীর আয়োজনে উত্তরার ১১ নং সেক্টরের পূজা মণ্ডপটির আলোকসজ্জা অনেকটা দূর থেকেই জানিয়ে দিচ্ছিল সাধারণ কোনও উৎসব নয় আজ।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, সপ্তমীতে ‘প্রাণদান’ আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে প্রাণ ফিরে পান মা দূর্গা। আর তাই হয়তো গতকাল ক্ষণে ক্ষণেই বদলে যাচ্ছিল পূজা মণ্ডপের প্রতিমার আলোকসজ্জা। কখনো লাল, কখনো নীল, আবার কখনো ঝলসানো হলুদ আলোতে সে প্রতিমা দেখে মা দূর্গার একাধিক রূপের কথা মনে পড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক দর্শনার্থীদের জন্য।

পূজা মণ্ডপটিতে কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত থাকলেও, খুব গোছানো এবং পরিপাটিভাবে্ই সম্পন্ন হয়েছে সপ্তমীর আয়োজন। পাশাপাশি ছিল অষ্টমীর প্রস্তুতি।  একদিকে যেমন সময় মেনে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল আরতি, ঠিক একইভাবে মণ্ডপের ভেতরেই পাশের একটি মঞ্চে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে চলছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বড় কোনও  শিল্পী নয় দর্শনার্থীরাই যোগ দিচ্ছিলেন সে আয়োজনে।006

ধর্মসঙ্গীত থেকে শুরু করে আবৃত্তি পর্যন্ত সবকিছুতেই সরাসরি অংশগ্রহণ করছিলেন তারা। পূজা কমিটির পক্ষ থেকে আবার খানিকসময় পরপর উপহারও দেওয়া হচ্ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিশুদের।

 সবমিলিয়ে জমজমাট এক আয়োজনে মেতে ছিল ১১নং সেক্টরের পূজা মণ্ডপ। এতো বড় এই আয়োজনের নিরাপত্তা দিতেও কোনো কার্পণ্য করেনি নিরাপত্তাবাহিনী। র‌্যাব, পুলিশ, আনসারবাহিনীর দায়িত্বরত সবাই সবার সাধ্যমতো সার্বক্ষণিক দায়িত্বপালন করছিলেন। এ ছাড়াও দর্শনার্থীদেরকে বাড়তি সাহায্য করার জন্য মণ্ডপের ভেতরে পূজা কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরাও উপস্থিত ছিলেন। চমৎকার ওই আয়োজনে কিছুটা সময় থাকার পর যে কোনো দর্শনার্থীরই মনে পড়ে যাবে ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। সম্প্রতি মায়ানমারের আরাকানে ঘটে যাওয়া রোহিঙ্গা হত্যার প্রতিবাদের ব্যানারও ছিল মণ্ডপ আঙিনাতেই। উৎসবের ফাঁকে ফাঁকে ব্যানারটি চোখে পড়লেই মনে পড়ে যাচ্ছিল পার্শ্ববর্তী দেশে ঘটে যাওয়া নিষ্ঠুরতার কথা, একই সঙ্গে মানবিকতা জাগ্রত রাখার প্রয়োজনীয়তাটাও।009 (1)

মজার ব্যাপার হলো, দর্শনার্থীদের ভিড় কী সন্ধ্যা থেকেই বাড়তে শুরু করেছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাওয়া মাত্র মণ্ডপ গেটে দায়িত্বরত আনসার সদস্য জানালেন, সকাল থেকেই দর্শনার্থীরা আসছেন, দুপুরের পর থেকে দর্শনার্থীদের সে ঢল আরও বেড়েছে। আর আলাপের এক পর্যায়ে হাসি মুখেই জানালেন দর্শনার্থীদের যাতে অসুবিধা না হয় সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আজ দুপুরে খাওয়া হয়নি তার। কন্ঠস্বরে ক্লান্তি থাকলেও, ছিল না কোনো অভিযোগ। উল্টো উৎসব আমেজের অদ্ভুত এক উজ্জ্বলতার ছোঁয়া ছিল ওই আনসার সদস্যের মুখে। তার মুখের অভিব্যক্তিই অনেকটা পরিষ্কার বলে দিচ্ছিল, শুধু দায়িত্বের খাতিরে নয়, জমজমাট এই উৎসব থেকে যেন কোনওভাবেই বঞ্চিত হতে চাইছেন না তিনিও। অন্যদিকে পূজা কমিটির এক স্বেচ্ছাসেবক হাতের কাজ করতেই করতেই আনন্দিত কন্ঠে জানালেন, শুধু উত্তরাবাসী নয়, দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ এই আয়োজনে সামিল হতে এসেছেন এবং এখনও আসছেন। রাত ৮ টা ৩০ মিনিটে মণ্ডপ থেকে বের হওয়ার সময়ই মিলল সে কথার সত্যতা। রিকশায়, গাড়িতে এমনকি পায়ে হেঁটেও আসছেন অসংখ্য মানুষ, ধৈর্য্য নিয়ে পার হচ্ছেন নিরাপত্তা বেষ্টনী, তারপর হারিয়ে যাচ্ছেন পূজা মণ্ডপের ভিড়ে। সবমিলিয়ে মনে হল, পরিচিত হওয়া স্বত্তেও এ যেন এক অন্যরকম মিলন মেলা, যা থেকে বাদ পড়তে চাইছেন না কেউ।