মাটি ও মানুষের ছবি আঁকতে ভালোবাসি: সমর মজুমদার

ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে চলছে চিত্রশিল্পী সমর মজুমদারের একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘মৃত্তিকা মায়া।’ শিল্পীর আঁকা ৩৮টি ছবি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রদর্শনীর পঞ্চম দিনে বাংলা ট্রিবিউন প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয় শিল্পী সমর মজুমদারের। তাদের আলাপচারিতার কিছু অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

শিল্পী সমর মজুমদার

বাংলা ট্রিবিউন: এই প্রদর্শনীকে ঘিরে প্রত্যাশা ও সন্তুষ্টির মাত্রা যদি বলতেন

সমর মজুমদার: আমি আমার যে দৃষ্টিকোণ থেকে বা যে মনোভাব থেকে দেশকে দেখি সেই অনুভূতিগুলো ছবিতে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করি। সেগুলো অন্যদের সঙ্গে কতটা মিলল এবং মিলল না সেই ব্যাপারগুলো আমি আমার প্রদর্শনীর মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করি, এখানে বিক্রি কেমন হলো সেটা একদমই উদ্দ্যেশ্য নয়। দেশের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে কতটা কাছাকাছি আসতে পারি সেটা বুঝে নেওয়াটাই আমার প্রত্যাশা।

বাংলা ট্রিবিউন: প্রদর্শনীর নাম ‘মৃত্তিকা মায়া’ কেন?  

সমর মজুমদার: এই মায়া আমার মাটির মানুষের প্রতি মায়া, এই মায়া আমার অতীতে ছেড়ে আসা বাংলার প্রতি মায়া,  আমার ভাষার প্রতি মায়া, আমার সংস্কৃতির প্রতি মায়া। এই মায়া আমার পুরো  অন্তরে জুড়ে আছে। আমি দেখলাম আমার এই অনুভূতি প্রায় অনেকের সঙ্গেই মিলে যায়। তখন আমি আনন্দ পাই, নিজেকে সার্থক মনে হয়।

বাংলা ট্রিবিউন: এই প্রদর্শনীর পরিকল্পনা নিয়ে যদি কিছু বলতেন

সমর মজুমদার: আমি প্রথম থেকেই গ্রাম আঁকি। তবে আমার গত প্রদর্শনীতে কিছু ভিন্ন অনুভূতির ছবিও ছিল, এবারও সে রকমই পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এই গ্যালারিতে আমি বেশি জায়গা পাচ্ছিলাম না। তাই আমাকে যেকোনও একটি বিষয় বেছে নিতে হয়েছে। খেয়াল করলে দেখবেন যে এখানে সবগুলো ছবির মধ্যেই একটি ঐকতান আছে।

গ্রামবাংলার ছবি আঁকতে ভালোবাসেন শিল্পী সমর মজুমদার

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কোন মাধ্যমে আঁকতে বেশি পছন্দ করেন এবং এখানকার ছবিগুলো কোন মাধ্যমে আঁকা?

সমর মজুমদা: আমি এক্রেলিকে ছবি আঁকতে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। এই প্রদর্শনীর ছবিগুলোও এক্রেলিকে আঁকা। কিছু ক্যানভাসে আঁকা এবং কিছু  কাগজে আঁকা।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার ছবিতে গ্রামবাংলার দৃশ্য দেখা যায় বেশি। এটার কি কোনও বিশেষ কার আছে?

সমর মজুমদার: আমি গ্রামবাংলার ছবি আঁকতে ভালোবাসি। মাটি ও মানুষের ছবি আঁকতে ভালোবাসি। আমি একদম মাটি সামলানো মানুষগুলোকে আঁকি। যে মানুষগুলো গ্রাম থেকে শহরে এসেছে তারা নস্টালজিক হয়ে যায় এগুলো দেখে। এটা আমি খুবই আনন্দ নিয়ে দেখি। আমি যে মায়ের স্নেহ পেয়েছি, যে বোনের আদর পেয়েছি, যে কৃষককে আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে সামনে থেকে দেখেছি, যে পাখিকে আমি গাছে দেখেছি, যে ফুল, ফল, শিশির, বাতাসে আমি বড় হয়েছি সেগুলো নিয়ে থাকতেই আমি ভালোবাসি। আমার সন্দেহ হয় যে, এখনকার শিশু কিশোররা সেভাবে বড় হতে পারছে কিনা।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার নামের সঙ্গে প্রচ্ছদ শিল্পী পরিচয়টা বারবারই চলে আসে। এ ব্যাপারে যদি বলতেন 

সমর মজুমদা: আমি একসময় প্রচুর প্রচ্ছদ আঁকতাম। প্রচ্ছদ আঁকা কখনোই একজন শিল্পীকে পূর্ণতা দিতে পারে না।  আমি সরকারি চাকরি করতাম। সরকারি চাকরি করে পেইন্টিং করার সময় পাওয়া কঠিন। বলতে পারেন, আমি আমার হাত এবং মেধাকে চর্চার মধ্যে রেখেছি প্রচ্ছদ আঁকার মাধ্যমে।

IMG_20171017_160909
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার আগামীর পরিকল্পনা কি?

সমর মজুমদার: সামনে আমি শুধু ছবিই এঁকে যাবো। আমার কতগুলো ইচ্ছে আছে; মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কিছু ছবি নিয়ে একটা প্রদর্শনী করার ইচ্ছে আছে, আমাদের ভাই বোনদের সম্পর্ক নিয়ে কিছু ছবি আঁকা আছে এবং আমাদের গ্রামীণ লোকগাঁথা যেমন মহুয়া, সূচ কুমার, লাল কমল-নীল কমল, ক্ষীরের পুতুল, ঠাকুরমার ঝুলি, ডালিম কুমার ইত্যাদি নিয়ে প্রদর্শনী করার ইচ্ছে আছে।  

বাংলা ট্রিবিউন: নতুনদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেনকী?

সমর মজুমদার:  আমি সবাইকে বলবো দেশের মাটিতে পা রাখতে। এখন একটা ধারা চলছে মূর্ত ছবি আঁকার। যে ছবির স্বাদ মানুষ ছবি নিতে পারেনা। আমাদের সবার উচিত মাটির কাছে দাঁড়ানো, সাধারণ মানুষকে উপলব্ধি করাটা নতুন পুরোনো সবার জন্য জরুরি।