তিনি যে আসবেন, আসছেন— তার আভাস বেশ কিছুদিন হলো প্রকৃতি জানান দিয়ে যাচ্ছে। মাঘের শেষ বেলায় এসে তাই শীতল হাওয়ার পাশাপাশি খানিকটা বাসন্তি উষ্ণতাও টের পাওয়া যাচ্ছে। শীতল হাওয়ার সাথে উষ্ণতার পরশ তাই যেন কানে চুপিচুপি এসে বলে যায়— দখিন দুয়ার খোলো, আমি আসছি।
হ্যাঁ, আর ঢাক গুড়গুড় নয়, ষড়ঋতুর বাংলায় মহাসাড়ম্বরে ঋতুরাজের আনুষ্ঠানিক অভিষেক ঘটছে আজ। কারণ বাংলা দিনপঞ্জির পাতায় আজ পয়লা ফাল্গুন। শুরু হলো বসন্ত ১৪২৪। কবির ভাষা ধার করে তাই এখন কণ্ঠে গীত হোক— ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।/ তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে/ কোরো না বিড়ম্বিত তারে।/ আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো,/ আজি ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো।’
অমর একুশের বইমেলাতেও আজ পাওয়া যাবে বাসন্তের আগমনের সুবাস। বাসন্তী রঙের বাহারে আজ উচ্ছ্বল থাকবে বইমেলা। বসন্তের সূচনাকে স্মরণীয় করে রাখতে একে অপরকে আজ বই উপহার দেবেন কেউ কেউ। অনেকে আবার বইয়ের বাইরে দেবেন অন্য কোনও উপহারও। প্রেমিক-প্রেমিকারা পরস্পর মেতে উঠবেন দিনভর বসন্ত বিহারে। অনেক বছর ধরেই রাজধানী ঢাকায় বসন্ত উদযাপনের চিত্র এমনই। তবে শুধু ঢাকা নয়, দেশের অনান্য নগর, নগরের মানুষেরাও পিছিয়ে থাকবেন না বসন্তের সাজে নিজেকে মেলে ধরতে।
বসন্তে তারুণ্য ফিরে পায় গোটা প্রকৃতি। একইভাবে বসন্তে তারুণ্যও জেগে ওঠে। বসন্ত ভালোবাসা আর দ্রোহ জাগায় তরুণদের মনে। আমাদের জাতীয় ইতিহাসের দিকে তাকালে অন্তত তাই-ই মনে হয়। ১৯৫২ সালে এমন এক বসন্তেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে ছাত্র-জনতা জেগে উঠেছিল প্রবল ভালোবাসা আর প্রচণ্ড দ্রোহে। এরপর ফাগুনের পলাশ-শিমুলের সঙ্গে দ্রোহী তারুণ্যের সেই যে সন্ধি হলো, আজও তা থামেনি। তাই প্রতিবছর ফাগুনের আগুন নিয়ে বসন্ত জাগে আর জেগে ওঠে তরুণ-তরুণীরাও। বসন্তে আজও তারা দ্রোহের কথা বলে। বলে ভালোবাসার কথা। বলে, ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও, যাও গো এবার যাবার আগে...।’