ফাগুনে আগুন লাগে যে বাগানে

কথায় আছে ফাগুন এলে নাকি ডালে ডালে শিমুলের আগুন জ্বলে। এই সময়ে সিলেটের সুনামগঞ্জে গেলে কথাটি আপনাকে বিশ্বাস করতেই হবে! তাহিরপুর উপজেলার জাদুকাটা নদীর পাড়ের মানিগাঁও গ্রাম। সেখানে ১০০ বিঘারও বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত আছে সারি সারি শিমুল গাছ। শিমুল গাছের বিস্তীর্ণ বাগান হলেও স্থানীয়রা চেনেন তুলা বাগান নামে। কারণ এই বাগান থেকে বিপুল পরিমাণ শিমুল তুলা সংগ্রহ করা হয়।

শিমুল বাগান

প্রায় ১৩ বছর আগে ৩ হাজার শিমুল গাছের চারা রোপণ করেছিলেন স্থানীয় চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। ধীরে ধীরে যা পরিণত হয়েছে বিশাল শিমুল বাগানে। ভ্রমণপ্রেমীদের প্রিয় জায়গা হিসেবেও এটির কদর বেড়েছে। বসন্ত এলেই এ বাগানে ডালে ডালে আগুন লাগে। শিমুল ফুল ফাগুনের শুরুতেই ফোটা শুরু করে বলেই এই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখার এখনই উপযুক্ত সময়। কারণ এই সময় রক্তলাল ফুলগুলো আগুনের শিখার মতো ডালে জ্বলজ্বল করে।

টেকেরঘাট

সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা শিমুল গাছের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেয় মেঘালয়ের পাহাড়। ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে জাদুকাটা নদী আর এপারে শিমুল বন- সব মিলিয়ে একজন ভ্রমণ পিপাসুর মন জয় করতে সক্ষম এই জায়গা।

শুধু বাগান ঘুরে ক্ষান্ত না হলে আরও আছে টেকেরঘাট নিলাদ্রি লেক। পাহাড়ঘেরা সীমান্ত এলাকায় নীল জলের লাইম স্টোন লেক এটি। স্থানীয়রা টেকেরঘাট পাথর কোয়ারি নামে চেনে। কারণ এখানে রয়েছে চুনাপাথরের পরিত্যাক্ত খনি। শিমুল বাগান থেকে মোটরসাইকেলে করে ১৫ মিনিটের রাস্তা। চাইলেই লেকের অপরূপ সৌন্দর্যে কিছুসময় ব্যয় করা যায়। নিলাদ্রি লেকের আশপাশের জায়গাকে বাংলাদেশের কাশ্মীরও বলে থাকেন অনেকে। সাতার জানা থাকলে এই লেকে নৌকা চালিয়ে ঘুরে দেখা যায়।

শিমুল বাগান

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাসে করে সুনামগঞ্জ যেতে হবে। সুনামগঞ্জ শহর থেকে অথবা ঢাকা থেকে যাওয়ার পথে সুনামগঞ্জ নতুন ব্রিজে নামতে হবে। ব্রিজ পার হয়ে ওপারেই আছে বারেকটিলা অথবা লাউগড় বাজার যাওয়ার মোটরসাইকেল। এই মোটরসাইকেলে করেই আপনি চাইলে একসাথে শিমুল বাগান, নিলাদ্রি লেক, বারেক টিলা, জাদুকাটা নদী সব ঘুরে দেখতে পারবেন। আবার চাইলে সিএনজিতেও যাওয়া যায় তবে সিএনজিতে গেলে লাউগড় বাজারেই নামতে হবে। সেখান থেকে জাদুকাটা নদীতে নৌকায় করে পার হয়ে হেঁটে যেতে হবে শিমুল বাগান। তবে শিমুল বাগান ছাড়া অন্যান্য জায়গা ঘুরে দেখতে মোটর সাইকেলের বিকল্প নেই।

জাদুকাটা নদীর ওপারে খাবারের দোকান তেমন নেই বললেই চলে। তাই সাথে শুকনা খাবার রাখা ভালো। খাওয়াদাওয়া করতে চাইলে লাউগড় বাজারে কয়েকটি হোটেল আছে।