জলকেলি উৎসবে মাতোয়ারা রাখাইন পল্লী

কক্সবাজারে তিন দিনব্যাপী রাখাইন সম্প্রদায়ের জলকেলি উৎসব চলছে। এ উৎসবকে ঘিরে শহরের রাখাইন পল্লীতে চলছে ভিন্ন আবহ। নাচে-গানে মাতোয়ারা এখন রাখাইন পল্লী। রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন, দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও অংশ নিয়েছেন জলকেলি অনুষ্ঠানে।

1

রাখাইন পঞ্জিকা মতে  ১৬ এপ্রিল শেষ হয়েছে রাখাইন বর্ষ ১৩৭৯  সন। আর ১৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে নতুন ১৩৮০ রাখাইন বর্ষ। রাখাইন বর্ষকে বিদায় ও বরণে প্রতি বছর ‘সাংগ্রেং পোয়ে’ বা জলকেলি উৎসবের আয়োজন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) শুরু হওয়া ঐতিহ্যবাহী জলকেলি উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ। কাল বৃহস্পতিবার এ উৎসব শেষ হবে।

কক্সবাজার শহরের রাখাইন পল্লীর শিক্ষার্থী মং হ্লা ওয়ান, বাওয়ান, ক্যনাই, থেন থেন নাই, চ লাইন, জনি, জ জ, মংসিয়াই, ইয়ুদি, জওয়ান, আক্য, আবুরি, ওয়ানশে, কিংজ, হাপু ও ওয়াহ ওয়াহ জানান; ‘আনন্দ-উল্লাসে নতুন বছরকে বরণ করে নিচ্ছে সবাই। এর মাধ্যমে আমরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটানোর মধ্য দিয়ে পুরনো দিনের সব ব্যথা, বেদনা, হিংসা বিদ্বেষ ভুলে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। এটি আমাদের কাছে খুবই পবিত্র ও উৎসবের দিন।’

2
কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক পিন্টু অরেং বলেন, ‘এলাকাভিত্তিক শোভাযাত্রা, বিশেষ ঘন্টা বাজিয়ে কিয়াংসহ প্যান্ডেল পরিদর্শন, তরুণরা মাটির তৈরি কলসি ও পেছনে বয়স্ক নারী-পুরুষ ‘কল্প তরু’ বহনসহ নানা কর্মসূচী পালন করবে।

4

কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায়ের নেতা ও আরডিএফ এর সভাপতি অধ্যক্ষ ক্যথিং অং বলেন, চৈত্র সংক্রান্তি থেকে রাখাইনদের বর্ষবরণ সাংগ্রেং পোয়ে উৎসব শুরু হয়ে চলে প্রায় সপ্তাহজুড়ে। উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব পানি খেলা বা জলকেলি বৈশাখের চতুর্থ দিন থেকে শুরু হয়। এবারের সাংগ্রেং পোয়ে বা জলকেলি উৎসব চলবে ৪ বৈশাখ থেকে ৬ বৈশাখ পর্যন্ত। ইংরেজি তারিখের হিসেবে ১৭ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল।

5

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজুল হক টুটুল বলেন, রাখাইনদের জলকেলি উৎসব উপলক্ষে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও মাঠে রয়েছে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

3

উল্লেখ্য, কক্সবাজার শহর ছাড়াও মহেশখালী, টেকনাফ সদর, হ্নীলা চৌধুরী পাড়া, রামু, পানিরছড়া, চকরিয়ার মানিক পুরসহ রাখাইন অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সপ্তাহজুড়ে নববর্ষ পালনে নানা অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে শহরের টেকপাড়া, হাঙর পাড়া, বার্মিজ স্কুল এলাকা, চাউল বাজার, পূর্ব-পশ্চিম মাছ বাজার, আরডিএফ প্রাঙ্গণ, ক্যাং পাড়া ও বৈদ্যঘোনাস্থ থংরো পাড়ায় তৈরি করা হয়েছে জলকেলির ২০টি নান্দিক প্যান্ডেল। রঙিন ফুল আর নানা কারুকার্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্যান্ডেলের চারপাশ। সবার মাঝে এখন বর্ষবরণের আমেজ। রাখাইন এলাকার প্রতিটি বাড়ি সেজেছে নতুন সাজে। ছোট শিশু থেকে শুরু করে বড়রাও ব্যস্ত নতুন কাপড়ে নিজেকে রঙিন করে তুলেছে। উৎসবের মূল লক্ষ্য অতীতের সকল ব্যথা-বেদনা, গ্লানি ভুলে ভ্রাতৃত্ববোধের মাধ্যমে সামনে দিকে এগিয়ে যাওয়া।