সরেজমিন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে অবস্থিত শেখের চর বাবুরহাটে কাপড়ের বাজারটিতে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারটির ছোট-বড় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার দোকানে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিস, থান কাপড়, বিছানা চাদর, শার্টপিস, প্যান্ট পিস, পাঞ্জাবির কাপড় ও গামছাসহ দেশীয় প্রায় সব ধরনের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারের প্রতিটি গলিতে কাপড় আনা নেওয়ায় ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতারা। দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর জন্য ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উপর ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকাপভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে তোলা হচ্ছে শত শত কাপড়ের গাইট।
ব্যবসায়ীরা জানান, রোজা শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে থেকেই দেশীয় এই কাপড়ের বাজারটিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারী ক্রেতাররা আসতে শুরু করায় পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। ক্রেতা চাহিদার কথা বিবেচনা করে প্রতি বছরই ঈদ উপলক্ষে এসব কাপড়ের ডিজাইনে আনা হয় বৈচিত্র্য।
দেশের কাপড় উৎপাদনকারী প্রায় সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব একাধিক শো-রুম রয়েছে এখানে। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ কারখানাও নরসিংদী কেন্দ্রিক। ফলে এখানকার উৎপাদিত কাপড়ের গুণগত মান ভাল ও দামেও সাশ্রয়ী। এছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানে তৈরিকৃত যাবতীয় কাপড়ের সমারোহ থাকে এখানে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ও ন্যায্য দামে চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের দেশীয় কাপড় পাওয়ার কারণে এই হাটকে ঘিরে পাইকারী ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি।
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার খুচরা কাপড় ব্যবসায়ী ফয়সাল বাদশা ট্রিবিউনকে বলেন, মোকামে ১৫ রোজার পর থেকে ঈদের কেনাকাটা পুরোদমে শুরু হবে বলে আশা করছি। এ জন্য আগে থেকেই দোকানে কাপড় তোলার জন্য বাবুরহাটে এসেছি। দুইদিন অবস্থান করে দেড় লাখ টাকায় প্রয়োজনীয় সব কাপড় কেনাকাটা শেষ করেছি।
সিলেটের শ্রীমঙ্গল থেকে আসা পাইকারী ক্রেতা হাজী মো: শাহ আলম মিয়া বলেন, বাবুরহাটে লুঙ্গি থেকে শুরু করে সবধরণের দেশীয় কাপড় সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। এক সঙ্গে সবধরণের কাপড় ও ন্যায্য দাম সুবিধার জন্যই আমরা নিয়মিত এখানে আসি। এ বছর ঈদ উপলক্ষে দোকানের জন্য অতিরিক্ত কাপড় কিনেছি, বিক্রি ভাল হলে আবারও আসতে হবে বাবুরহাটে।
কুমিল্লার পাইকারী ক্রেতা সালাহ উদ্দিন রুবেল বলেন, বাবুরহাটকে দেশের কাপড় ব্যবসার নাভি বলা হয়ে থাকে। সারাদেশ থেকে খুচরা কাপড় ব্যবসায়ীরা এখান থেকে কাপড় কিনে থাকেন।
পাইকারী বিক্রেতা ফারুক শিকদার ও সুমন হোসেন বলেন, প্রতি বছরই ঈদে কাপড়ের রং ও ডিজাইনে বৈচিত্র্য আনা হয়। ক্রেতারা চাহিদা অনুযায়ী কাপড় কিনতে আগে থেকেই এখানে আসতে শুরু করেন। এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় বেচাকেনা সন্তোষজনক বলেও জানান তারা।
শেখেরচর-বাবুরহাট বণিক সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল বারেক মিয়া ট্রিবিউনকে বলেন, বাজারটিতে নিয়মিত (বৃহস্পতিবার-রবিবার পর্যন্ত) সাপ্তাহিক হাটে ৫ শত থেকে ৭ শত কোটি টাকা বেচাকেনা হলেও ঈদ উপলক্ষে বেচাকেনা বেড়ে দ্বিগুণ হয়। এ বছর ঈদ উপলক্ষে ১২শ’ কোটি থেকে প্রায় ১৫ শত কোটি টাকার কাপড় বেচাকেনা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সন্তোষজক বিক্রির কারণে ব্যবসায়ীরা খুশি।
ঈদ উপলক্ষে দিন ও রাতে এই হাটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।