কিশোরগঞ্জের লিচুর খ্যাতি দেশজুড়ে

lichu-2কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ইউনিয়ন জুড়ে বাগানের হাজার হাজার গাছে এখন পাকা লিচুর সমারোহ। টসটসে রসালো, সুমিষ্ট স্বাদ, সুন্দর গন্ধ ও গাঢ় লাল রঙের বৈশিষ্টের কারণে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর খ্যাতি সারাদেশ জুড়ে। বছরের পর বছর ধরে মঙ্গলবাড়িয়ার সুস্বাদু লিচু মিটিয়ে আসছে ফল প্রেমীদের রসনা তৃপ্তি।

kishoreganj-lichuলিচু পাকতে শুরু হয়েছে তাই চলছে ফল সংগ্রহের কাজ। ভরা মৌসুমে ক্রেতা-বিক্রেতা ও পাইকারদের পদচারণায় মুখর এখানকার লিচু বাগান। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগমন ঘটছে শত শত পাইকার ও খুচরা ক্রেতাদের।

ঠিক কত বছর আগে এবং কিভাবে এখানে লিচু চাষের প্রচলন শুরু হয়েছে তার সঠিক কোনও তথ্য নেই। তবে স্থানীয়দের ধারণা অন্তত কয়েকশত বছর আগে এখানে লিচু চাষ শুরু হয়েছে। এখানে উৎপাদিত লিচু ‘মঙ্গলবাড়িয়া জাত’ হিসেবেই পরিচিত। গ্রামের নামানুসারেই এখানে লিচুর নাম ‘মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু’। প্রাথমিক পর্যায়ে এখানকার বাড়ি বাড়িতে প্রচুর লিচু গাছ লাগানো হলেও দ্রুত এর খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ শুরু হয় কয়েক দশক আগে।

kishoreganj-lবর্তমানে এ ইউনিয়নের অনেক কৃষকেরই উপার্জনের মূল উৎস লিচু চাষ থেকে উপার্জিত অর্থ। স্বচ্ছল অনেক কৃষকেরই রয়েছে ২৫-৩০টি থেকে শতাধিক লিচু গাছ। লিচু চাষ এখন এ এলাকার কৃষকের জন্য সৌভাগ্য বয়ে এনেছে। দেশ-বিদেশে লিচু বিক্রি করে অনেক চাষি উপার্জন করছেন লাখ লাখ টাকা। চাষিদের দেওয়া হিসাবমতে প্রতি মৌসুমে মঙ্গলবাড়িয়ায় লিচু বিক্রি হয় কোটি কোটি টাকার। এবারও ধারণা করা হচ্ছে প্রায় বিক্রিত লিচুর অর্থের পরিমাণ হবে প্রায় ১০ কোটি টাকা।

litchএলাকার অনেক চাষির আয়ের প্রধান উৎস এখন লিচু চাষ। শুধুমাত্র লিচু বিক্রি করেই তারা তাদের সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে সক্ষম হয়েছেন। এ থেকে উপার্জিত অথের্র উপরই নির্ভর করে এখানকার কৃষকরা পরিবার নিয়ে সারা বছরের ব্যয় নির্বাহ করে থাকেন। শুধু তাই নয় লিচু বাগানে শ্রম দিয়ে কর্মসংস্থান হয়েছে শত শত শ্রমিকের। লিচু চাষিদের বিশ্বাস প্রয়োজনীয় সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা প্রদান করা হলে একদিকে যেমন এখানকার উৎপাদিত লিচু চাষের পরিধি আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে, সেই সঙ্গে বাজারজাত করণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে পাল্টে যেতে পারে এলাকার অর্থনীতির চিত্র।

lichiলিচু চাষি শামীম মিয়া বলেন, মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু আমরা ছোট থেকে খেয়ে আসছি আমার বাপ দাদারাও এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বলতে গেলে বংশানুসারে বছরের পর বছর এখনারকার বেশির ভাগ মানুষই লিচু চাষের সথে সম্পৃক্ত। এখানকার লিচু খেতেও সুস্বাদু, ঘ্রাণও সুন্দর এবং দেখতেও ভাল। প্রতি বছরই লিচু চাষ করে লাভের মুখ দেখেছি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালই হয়েছে।

lichuলিচুর পাইকারী ব্যবসায়ী এবং চাষি তৌহিদ মিয়া বলেন, আমার ১৫১টি গাছ আছে। এসব গাছ আমি আগাম কিনে থাকি। প্রায় ৪০ বছর ধরে এ এলাকায় লিচুর চাষ করে বিক্রি করছি। লিচু চাষে উৎপাদন খরচ বাবদ আমার প্রায় ২১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আশা করছি এবার এখান থেকে ২৫/২৬ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হবে। এই লিচু অনেক সুস্বাদু, বেশির ভাগই অন্যান্য জেলার মানুষ এখানে আসে লিচু কেনার জন্য আসে।

licউপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গৌড় গোবিন্দ দাস মঙ্গলবাড়িয়া লিচু সর্ম্পকে বলেন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মঙ্গলবাড়িয়া জাতের লিচু খুবই ভাল। এলাকার কৃষকরা এই জাতটি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। এ লিচু আমাদের দেশের একটি বড় সম্পদ। উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র থেকে কয়েক বছর ধরেই এ লিচু চাষ নিয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তবে সরকার এগিয়ে আসলে আরো বেশি সুফল পাওয়া যাবে বলে আশা করেন তিনি।lichu1

litchi

lich