কামাল লোহানীর ৮৫তম জন্মোৎসব

বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক কামাল লোহানী ৮৫ বছরে পা দিয়েছেন। তিনি একাধারে বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সনতলা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মদিন উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৬ জুন) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এক সম্মিলন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবেদ খান, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর, জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক আশরাফুল আলম, শিল্পী খুরশিদ আলম, শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, বাচিকশিল্পী ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়সহ আরও অনেকে। এছাড়াও তার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুসহ শতাধিক শুভাকাঙ্ক্ষী ফুলের তোড়া ও উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

KL5


জন্মদিন উপলক্ষে কামাল লোহানীকে উদ্দেশ্য করে লেখা একটি গান শোনান গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর। তিনি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘এখনও অবিচল, এখনও এই বয়সে তিনি সমস্ত সংগ্রামে আমাদের সঙ্গে থাকেন। সেই ষাটের দশকে ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠির বলয়ে তার হাত ধরে গণসংগীতের বলয়ে প্রবেশ করেছি। আজকে এই মানুষটির জন্মদিনে আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনের লবিতে তার স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন ছবি দিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ছবি প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করেন ভাষাসৈনিক ডা সাঈদ হায়দার। উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, ‘কামাল লোহানী আমার রক্তের আত্মীয় না হলেও সে আমার আত্মীয়। তিনি একজন খাঁটি বাঙালি। তার কর্মে, পরনে তিনি সব সময় বাঙালীয়ানাকে ধরে রাখেন। তিনি ৮৫তে পা দিয়েছেন বটে, তবে তাকে আরও সময় বেঁচে থাকতে হবে যুব সমাজকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য।’
সন্ধ্যায় লবিতে শুভদ্বীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে তার আলোকিত জীবনের প্রার্থনা করা হয়। এসময় তার চতুর্থ প্রজন্মের হাত দিয়ে মিষ্টি মুখ করেন তিনি। সন্ধ্যা সাতটার দিকে মিলনায়নে নৃত্য পরিবেশনা, তার ব্যক্তিগত তথ্যচিত্র প্রদর্শন, জীবনভিত্তিক পটের গান এবং সমবেত সংগীত পরিবেশন করা হয় তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে।
বহুমাত্রিক পরিচয়ের এই বরেণ্য ব্যক্তি কামাল লোহানী বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
তিনি দৈনিক আজাদ, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক বার্তাসহ বিভিন্ন পত্রিকার কর্মরত ছিলেন। তিনি সাংবাদিক ইউনিয়নে দু'দফায় যুগ্ম-সম্পাদক এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন।
১৯৬২ সালে স্বল্পকাল কারাবাসের পর ছায়ানট সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কামাল লোহানী সাড়ে চার বছর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর মার্কসবাদী আদর্শে ১৯৬৭ সালে গড়ে তোলেন 'ক্রান্তি'। তিনি বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি ছিলেন চার বছর (২০১২ ডিসেম্বর-২০১৬ ডিসেম্বর)। বর্তমানে তিনি উদীচীর কেন্দ্রীয় কমিটির এক নম্বর সদস্য।