কাশবনের খোঁজে মৈনট ঘাটে

'তিতলি’র আগমনকে মোটেও ভালোভাবে না নিয়ে আকাশ মুখ ভার করে রেখেছে সেই সকাল থেকেই। ঝড়টি আসবে আসবে করে যখন সবাই একটু বুঝেসুজেই ঘোরাঘুরি করছে, তখন আমরা কোনও কিছু না ভেবেই হুট করেই রওনা দিলাম মৈনট ঘাটে। উদ্দেশ্য ঘাট দেখার পাশাপাশি কাশফুলের রাজ্যে একটু ঢুঁ মারা! শুনেছি ওখানে হাজারে হাজারে ফুটেছে কাশের দল।

1
গুলিস্তান থেকে বাসে রওনা দিলাম। এমনিতেই মনটা একটু খুঁত খুঁত করছিল দেরিতে রওনা দিয়েছি বলে। কথায় আছে, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই অন্ধকার হয়! অন্ধকার না হলেও আমরা চোখে অন্ধকার দেখা শুরু করলাম একটু পরেই। কারণ বাস যে রাস্তা ধরেছে সেটাই একটু পর পর বন্ধ! রাস্তার কাছ চলছে বলে আমদের খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হচ্ছে। ২ ঘণ্টার পর সাড়ে ৪ ঘণ্টায় পাড়ি দিয়ে যখন ঘাটে নামলাম তখন মেঘের আড়ালে বসেই সূর্যমামা বিদায়ের আয়োজন শুরু করেছে।   

2
গোধূলিবেলায় পদ্মাপাড়ে দাঁড়াতেই এক পশলা শীতল বাতাস ছুঁয়ে গেল, দূর করে দিলো পথের সব ক্লান্তি। শুনেছিলাম মৈনট ঘাটে মানুষের ভিড় থাকে অনেক। যদিও আমরা সাতজন ছাড়া আর কাউকেই দেখলাম না। এটা ‘তিতলি’র অবদান না হয়ে যায় না!

দূরে দেখা যায় কাশবন

6
টুক টুক করে কয়েকটা ছবি তুলতেই নির্দেশনা এলো দৌড়ে সামনে যাওয়ার। নৌকা ঠিক করা হয়েছে, কাশফুল দেখার জন্য। হাতে একদম সময় নেই, তাই হাঁটা চলবে না। ভৌ দৌড় দিয়ে নৌকায় উঠলাম। মাঝি মামা সশব্দে ছেড়ে দিলেন নৌকা।

5

10

3
পদ্মা উত্তাল, তবে ভয় পাওয়ার মতো উত্তাল নয়- ভরসা দিলেন মাঝি মামা। বড় বড় ঢেউ এসে দুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে নৌকা। মেঘকালো আকাশ মিশেছে পদ্মার ঘোলা জলে। কী অপূর্ব সেই রূপ! ১৫ মিনিটের মতো পার হয়েছে। সামনে তাকিয়ে দেখি দূরে কালো আকাশের নিচে সাদা রেখার মতো কী যেন দেখা যাচ্ছে। আরেকটু কাছাকাছি যেতেই লাফিয়ে উঠলাম সবাই আমরা। যত দূর চোখ যায় কাশফুলের ছড়াছড়ি। ধীরে ধীরে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠলো কাশবন। যদিও শেষের কাশবন অনেকটাই বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। অবশ্য আমাদের উচ্ছ্বাস দেখে সেটা একদমই বোঝা গেল না।

11

12

8
নৌকা পাড়ে ভিড়তেই আমরা লাফিয়ে নেমে পড়লাম। দৌড়াদৌড়ি শুরু করলাম কাশবনে। নদীর একদম পাড় ঘেঁষেই কাশফুলের এই বিশাল রাজ্য। নদীর উথালপাতাল বাতাসে একে অন্যের উপর লুটিয়ে পড়ছে নিয়মিতভাবে। পানির ছলাৎ ছলাৎ শুনতে শুনতে কাশবনে ঘুরে চমৎকার একটি বিকেল কাটালাম। সন্ধ্যা হওয়ার ১০ মিনিট আগেই নৌকায় উঠে ধরলাম ফিরতি পথ। আরও খানিকটা সময় কেন হাতে নিয়ে গেলাম না সেই আফসোসটা অবশ্য রয়েই গেল!

13

শেষবেলায় ফিরতি পথের উচ্ছ্বাস

15
জেনে নিন
কাশফুল আছে আর অল্প কয়েকদিনই। তাই মৈনটে কাশফুল দেখতে চাইলে এখনই চলে যান। ঢাকার গুলিস্তান থেকে নিয়মিত বাস ছেড়ে যায় দোহারে অবস্থিত মৈনট ঘাটের উদ্দেশে। ঢাকা থেকে ২ ঘণ্টা সময় লাগে মৈনটে যেতে। তবে হাতে একটু সময় নিয়ে যাওয়াই ভালো। মৈনট ঘাটে ঘোরার পাশাপাসি নৌকা কিংবা স্পিড বোট নিয়ে ঘুরতে পারেন। খাবার হোটেল রয়েছে ঘাটে। নৌকায় ঘুরতে চাইলে ও দলে অনেকজন হলে রিজার্ভ নিয়ে নিন। ১০০০ হাজার টাকা মতো পড়বে ঘণ্টাপ্রতি। কাশবনে যেতে চান বললেই মাঝি নিয়ে যাবে। মৈনট ঘাট থেকে শেষ বাস ছাড়ে ছয়টা ১০ মিনিটে। এরপর ফিরতে চাইলে অটো নিয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে তারপরই ধরতে হবে ফিরতি বাস।

7

সাবধানতা

  • সাঁতার না জানলে পানিতে নামবেন না।
  • খাবারের প্যাকেট বা অপচনশীল কিছু ফেলবেন না ঘাটে কিংবা পানিতে।