শিল্পকলা একাডেমিতে ‘শিল্পের আলোয় মাতৃভাষা উদযাপন’

‘শিল্পের আলোয় মাতৃভাষা উদযাপন’ শিরোনামে শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালায় শুরু হয়েছে চিত্রকলা প্রদর্শনী। ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন শিল্পী মর্তুজা বশীরকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও আর্টোপলিটন যৌথভাবে ১৫ দিনব্যাপী এ চিত্রকলা প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। ৯ মার্চ পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী। রবি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং শুক্র ও শনিবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এই আয়োজন।

Art_1
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘শিল্পী মুর্তজা বশীরের সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৫১ সাল থেকে। আমাদের বন্ধুত্ব ছয় দশক পেড়িয়ে সাত দশকে পড়তে যাচ্ছে। বশীরকে আমি শ্রদ্ধা করি তার বহুমুখী প্রতিভার জন্য। তিনি চিত্রশিল্পী। তিনি উডকাট, লিনোকাট, জলরঙ, তেলরঙ, বস্তুধর্মী সব রকমের কাজ করেছেন। বিচিত্র তার গতিবিধি। চিত্রশিল্পের প্রায় সব মাধ্যমে তিনি কাজ করেছেন। এটি সামান্য ব্যাপার নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বশীর শুধু চিত্রশিল্পী নন, তিনি কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক। সাহিত্য ছাড়া তিনি চলচ্চিত্র অঙ্গনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখেছেন, নির্দেশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই মানুষটি বিচিত্রভাবে এত কিছু ধারণ করেন, সেটি ভেবে তার প্রতি শ্রদ্ধাবনত হতে হয়। বশীর একজন বিশিষ্ট ভাষাসংগ্রামী। ভাষা আন্দোলন নিয়ে লিখেছেন। বশীরকে সম্মাননা ও শ্রদ্ধা জানানো উপযুক্ত কাজ হয়েছে।’
শিল্পী মুর্তজা বশীর অনুভূতি প্রকাশের সময় বলেন, ‘আজীবন সম্মাননা শুনতে খুব ভালো লাগে। কিন্তু আমি মোটেও আনন্দিত নই। কেননা জীবিত অবস্থায় কী পেলাম, সেটি বড় কথা নয়; মৃত্যুর পরে আমাকে স্মরণ করা হবে কি না, সেটিই হলো আমার সবচেয়ে বড় চাওয়া।’ তিনি বলেছেন, ‘আমি জীবনভর চেষ্টা করেছি এখন কী পেলাম, সেটি আমার কাছে কিছু না। মৃত্যুর পর বেঁচে থাকব কি না, সেটি হলো আমার সাধনা।’
ছোটবেলায় বন্ধু বিয়োগের ঘটনা তুলে ধরে শিল্পী মুর্তজা বশীর বলেন, ‘ছোটবেলায় বইতে পড়েছিলাম মানুষ মরণশীল। কিন্তু তখন আমার অন্তরাত্মা বলে উঠল, না, মানুষ মরণশীল না। মানুষ অবিনশ্বর।’ এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘চিত্রকলা হোক কিংবা সাহিত্য হোক, সময়কে অতিক্রম করে যদি কেউ সৃষ্টি করতে না পারেন, সেটি লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট হবে না।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দ্য ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ‘আমি মর্তুজা বশীর স্যারের কাজের ভক্ত। যে জাতি তার শিল্পীদের, সৃজনশীল ব্যক্তিদের, লেখকদের সম্মান করে না, সে জাতি আসলেও খুব একটি উন্নতি করতে পারে না।’
প্রদর্শনীটির আয়োজক সংগঠন আর্টোপলিটনের কিউরেটর জাহাঙ্গীর আলম অনুষ্ঠানের বিষয়ে বলেন,’ বিশ্বের ৩২টি দেশ থেকে ২ হাজার ২৭৯টি কাজ প্রদর্শনীর জন্য জমা পড়েছিল। এর মধ্য থেকে ২১২টি কাজ প্রদর্শনীর জন্য স্থান পেয়েছে। এর মধ্য থেকে বিচারকেরা একজনকে সেরা পুরস্কার ও চারজনকে সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করেছেন।’
সেরা পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের শিল্পী কুন্তল বাড়ই। সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন ভারতের স্বপন দাস, বাংলাদেশের মো. আনিসুল হক, মালয়েশিয়ার ফাদলি সাবরান এবং বাংলাদেশের সামিয়া আহমেদ।
জুরি বোর্ডের সভাপতি বরেণ্য শিল্পী মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিল্পী মুর্তজা বশীরের ওপর সংশাবচন পাঠ করেন রশিদ আমিন। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অ্যাস্রোটেক্স গ্রুপের পরিচালক তামান্না তাহমিনা।

এই আয়োজনে অনলাইন মিডিয়া পার্টনার বাংলা ট্রিবিউন।