গরমে সুস্থ থাকতে

1939438_395878417219059_4760043493372414070_oগত ১০ দিন ধরে চলছে চৈত্রের দাবদাহ। কাঠফাঁটা গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা সবার। এই সময় অসুস্থ হয়ে যাওয়ার হারও বেশি। গরম মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, গরমের সময়ই মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তাই সতর্ক হয়ে না চললে যে কোনো সময়ই আপনি পড়তে পারেন অসুস্থতায়। গরমে সাধারণত যেসব স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে তা থেকে রক্ষা পেতে কয়েকটি তথ্য জেনে নিন।

প্রথমত মারাত্মক পানিশূন্যতা হয় গরমে। এ সময় শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বেরিয়ে যায়। এতে করে পানির পাশাপাশি লবণ বা ইলেকট্রোলাইটসের অভাবও দেখা দেয়। ইলেকট্রোলাইটস হচ্ছে সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের সম্মিলন। শরীর থেকে এই খনিজ কমে গেলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এ সময় শরীরের কোষ সজীব রাখতে প্রচুর পানি খেতে হবে। ইলেকট্রোলাইটসের অভাব পূরণ করতে খাবার স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে। শরীরে পানি কম হলে প্রস্রাব হলুদ হবে ও পরিমাণে কম হবে এবং জ্বালাপোড়া করবে। যতক্ষণ না প্রস্রাব স্বাভাবিক রং ফিরে পাবে, ততক্ষণ পর্যাপ্ত পানি, ডাব ও শরবতের মতো তরল পদার্থ খেতে হবে।

যেকোনো সময় হতে পারে হিটস্ট্রোক। অসহনীয় গরমে অনেকে মূর্ছা যেতে পারেন, এটিকেই হিটস্ট্রোক বলে। এমন ঘটনা ঘটলে তাকে যথাসম্ভব শীতল জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। পরনের কাপড়-চোপড় ঢিলা করে দিতে হবে, যাতে শরীরে পর্যাপ্ত বাতাস পৌঁছতে পারে। রোগীর মুখে শীতল পানির ঝাপটা দিতে হবে। রোগীকে গ্লুকোজ ও স্যালাইন খাওয়াতে হবে। যদি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান না ফিরে তবে তাকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে।  

গরমে শরীরে ঘাম জমে ছত্রাক সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। ঘাম শরীরের বিভিন্ন ভাঁজে বিশেষ করে কুঁচকিতে, আঙুলের ফাঁকে ও যৌনাঙ্গে জমা হয়ে সেখানে ছত্রাক সংক্রমণের পথ বিস্তার করে দেয়। তাই এ সময় ছত্রাক সংক্রমণ এড়াতে হলে শরীরের ভাঁজগুলোতে ঘাম জমতে দেওয়া যাবে না। যতবার সম্ভব গোসল করে ঘাম ধুয়ে ফেলতে হবে। নতুবা ভেজা কাঁপড় দিয়ে শরীরমুছে পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।  প্রতিদিন প্রতিদিন অন্তর্বাস পরিষ্কার করতে হবে। গরমে শরীরে ঘামাচি দেখা দিতে পারে। ঘামাচির চুলকানি রোধ করতে হলে অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি ঘামাচি থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে হবে। ঘামাচি থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে কখনো সিনথেটিক পোশাক পরা চলবে না। সব সময় সুতির ঢিলা পোশাক পরতে হবে। শরীরে যাতে ঘাম না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পরিষ্কার পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। প্রয়োজনে একাধিকবার গোসল করা যেতে পারে। শরীরে ট্যালকম পাউডার বেশি না ঢালাই শ্রেয়। রাতে শোয়ার সময় শরীরে ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরে ঘুমানো ভালো।

এসময় বাড়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ। তাই আপনার পরিবারের সদস্যরা পর্যাপ্ত পানি পান করছেন কিনা, নিরাপদ খাবার খাচ্ছেন কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে অতিরিক্ত তেল মশলার খাবার, বাসি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। গরমে আরামদায়ক পোশাকের মতো আরামদায়ক খাবার নির্ধারণ করে খাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। শিশুদের জন্য ইনস্ট্যান্ট নুডুলস, চপ, কাটলেট, নাগেটসের মতো খাবার না দিয়ে চিড়া, দই, তরমুজ, বাঙ্গি, লেবু জাতীয় ফল দিন বেশি করে।

লেখক: অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি অ্যান্ড থেরাপিউটিক্স।

ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ।

ছবি: সাজজিদ আহমেদ