রাজধানীর রায়েরবাজার, নিমতলা, শাখারিপট্টির প্রতিমা কারিগরদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেলো ব্যস্ততা। তুলির শেষ আঁচড় দিতে ব্যস্ত কারিগররা। দেবীর আবির্ভাব শরৎকালে হলেও প্রতিমা কারিগরদের কাজ শুরু হয় সেই বৈশাখের শুরু থেকেই। বর্ষাকালে বাড়ে কাজের তোড়জোর। বর্ষায় নরম মাটি সংগ্রহ করে রাখেন পালশিল্পীরা।
মুন্সীগঞ্জ থেকে প্রতিমা তৈরি করতে এসেছেন এই মন্দিরে। তিনি প্রতিমা তৈরি করেন প্রায় ৪৫ বছর ধরে। কানাই পাল বলেন, প্রতিমা তৈরি করা ভীষণ ধৈর্য ও মনোযোগের কাজ। যদি একবার ভুল হয়ে যায়, তাহলে আবার নতুন করে শুরু করতে হয়। একটি মণ্ডপের প্রতিমা বানাতে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় লাগে।
তার সঙ্গে কাজ করেন আরও চার জন কারিগর। মাসে তাদের বেতন দিতে হয় ৩০ হাজার টাকা। কাজ শেষে দেখা যায় হাতে তেমন কিছু থাকে না। বছরে একটা সময় প্রতিমা তৈরি করেন। পাশাপাশি সারা বছরই মাটির জিনিস তৈরি করেন তিনি। তবে বছরে একবার প্রতিমা তৈরি করে সংসার চলে না, ভীষণ অভাবে জীবন কাটাতে হয় তাদের। তাই প্রতিমা তৈরির পেশায় আসতে চাইছেন না কানাই পালের উত্তরাধিকারীরা।
শাখারিপট্টির অশোক পাল বৃষ্টির ওপর খুব বিরক্ত। বৃষ্টি এবার কাজ ব্যাহত করছে। রঙ দেওয়ার কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ করতে পারেননি। তাই ঘরের মধ্যে নইলে ছাউনিতে কাজ চলছে। প্রতিমা শুকাতে ফ্যানের বাতাস চলছে।
অশোক পাল জানালেন, অনেক সময় আগে তৈরি করে রাখা প্রতিমাও বিক্রি করে দেন। বেশ কয়েকটি পুরনো প্রতিমা দেখা গেলো। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী রঙ ও পোশাক পালটে দেন শুধু। তবে অনেকেই এখন থিম ধরে কাজ করছেন। থিমভিত্তিক কাজগুলোর জন্য কমপক্ষে চারমাস আগে অর্ডার নেন অশোক পাল। এগুলোর দাম আলাদা, কাজেও প্রচুর সময় দিতে হয়।
এভাবেই হাজারও সমস্যা মধ্যে দিয়ে প্রতিটি দুর্গাপুজা পার করেন হাজারো পালেরা। তাদের খবর কেইবা রাখে। দিন শেষে সন্তুষ্টি শুধু পুণ্যার্থীদের প্রশংসা।
ছবি: আল মামুন