সংকটেও ব্যবসা থাকুক অটুট

প্রতিটা সংকটই একটি নতুন সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়। করোনা মহামারির শিকার হয়েও আমি একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হয়েছি। ব্যবসা ভালোই দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এখনও আমি আর্থিক হিসাব ঠিকঠাক গুছিয়ে উঠতে পারছি না। একজন পূর্ণাঙ্গ হিসাবরক্ষক নিয়োগ দেব সেই বাজেটও নেই। এন্ট্রিলেভেলে কাজ করবে এমন একজন অভিজ্ঞ অ্যাকাউন্ট্যান্ট পাওয়া খুব মুশকিল’ কথাগুলো বলছিলেন শারমিন আক্তার। তিনি ই-কমার্স ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

accounting-small-business
শারমিন আক্তারের মতো কোভিড-১৯ মহামারিতে অনেকেই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রকাশ করেছেন। ব্র্যাকের এক জরিপ বলছে, করোনা মহামারিতে দেশের ৩৬ শতাংশ মানুষ চাকরি বা কাজের সুযোগ হারিয়েছে। এর মধ্যে ৩ শতাংশ লোক চাকরি থাকলেও বেতন পাননি।এই সংকটকে কাজে লাগিয়ে দেশে বেড়েছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার সংখ্যা। প্রযুক্তি বিষয়ক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনলাইনে বর্তমানে প্রায় দুই হাজার নতুন উদ্যোক্তা তাদের প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রি করছে কিন্তু যে হারে উদ্যোক্তা আর প্রতিষ্ঠান বেড়েছে সেই অনুপাতে বাড়েনি দক্ষ নিরীক্ষক, এন্ট্রিলেভেল অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং হিসাব পরামর্শক। ফলে এই নতুন উদ্যোক্তারা আটকে যাচ্ছেন আর্থিক হিসাবের বেড়াজালে। তারা সঠিক পরিকল্পনা করতে পারছেন না, নিতে পারছেন না বড় ধরনের ব্যবসায়িক ঝুঁকি। তেমনি একজন ঢাকার সাব্বির আহমেদ। অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা করেন সাব্বির।
তিনি বলেন, 'শুরুতে আমি একাই সামলে নিয়েছি সব হিসাবনিকাশ কিন্তু দিন দিন যখন আমার ব্যবসায়ের পরিধি বাড়ছে এখন আর একার পক্ষে সামলানো সম্ভব হচ্ছে না। আমি নিজেও একজন দক্ষ হিসাবরক্ষক খুঁজছি।’ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগ, বার্ষিক আয়কর রিটার্ন ফাইল জমা, ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদান, প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনসহ প্রতিদিনের জমা-খরচের হিসাব রাখা এবং প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একজন দক্ষ হিসাবরক্ষকের গুরুত্বকে অস্বীকার করার উপায় নেই।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর চেয়ারম্যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘এটা সত্য যে আমাদের এখানে দক্ষ অডিটর এবং হিসাবরক্ষকের অভাব আছে। প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতানিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই একজন দক্ষ হিসাবরক্ষক লাগবেই।আর এটা একটা টেকনিক্যাল বিষয়, এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশে দক্ষ অ্যাকাউন্ট্যান্ট তৈরি করতে হবে। দেশের প্রবৃদ্ধি এবং ব্যবসা বাণিজ্য যেভাবে প্রসারিত হয়েছে সে তুলনায় আমাদের এখানে দক্ষ টেকনিক্যাল জনবল তৈরি হয়নি। বিশেষ করে হিসাব বা নীরিক্ষা খাতে।’ অন্যদিকে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে মনে করা হয় কোনও না কোনও ক্ষেত্রে একজন উদ্যোক্তার লোনের প্রয়োজন হতেই পারে।গৃহ ঋণ, ব্যবসায়িক ঋণ, গাড়ি কেনার ঋণ, এমনকি সন্তানের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে লোন বা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রেও ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল থাকা বাধ্যতামূলক।কাঙ্ক্ষিত ঋণের জন্য সকল ধরনের কাগজপত্র তৈরি না থাকলে বঞ্চিত হতে হয় ঋণের সুবিধা থেকে।
শুধু তাই নয়, বার্ষিক আয়, কর প্রদানের উপযুক্ত হোক বা না হোক আয়কর রিটার্ন ফাইল ছাড়া কোনও প্রকারঋণ পাওয়া যায় না। আর এসব হিসাবের খুঁটিনাটি কাজকে সহজ করে দিতে পারেন একজন দক্ষ হিসাবরক্ষক। তাই আপনার ক্ষুদ্র ব্যবসাকে বড় করার পরিকল্পনা করতে হবে এখনই। সেক্ষেত্রে একজন এন্ট্রিলেভেল অ্যাকাউন্টিং টেকনিশিয়ান ব্যবসায়ের প্রাথমিক সব ব্যাপারে সাহায্য করার পাশাপাশি আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতে পারেন।