স্মৃতি ফামির ভার্চুয়াল রিয়েলিটি: অন্য এক বাস্তবতার গল্প

বাংলাদেশী লেখক স্মৃতি ফামি। তার লেখা বই  স্থান পেয়েছে অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ  বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের ন্যাশনাল লাইব্রেরি ও ব্রিটিশ গ্রন্থাগারে। 

88f3b1c7154d888f2026f3a881198e51-5f367fbdd6dc5
এছাড়া বিশ্বের শতাধিক ওয়েবসাইট, বইয়ের  দোকান ও নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লাইব্রেরিতেও স্থান পাচ্ছে ‘ভার্চুয়াল রিয়েলিটি উইথ সিনেমা টেকনিক অ্যান্ড স্টোরিটেলিং’ নামের এই বইটি। 

বাংলাদেশের এক সময়ের জনপ্রিয় মডেল ছিলেন স্মৃতি ফামি। তারপর পাড়ি  দেন যুক্তরাজ্যে। পড়াশোনা  করেছেন চলচ্চিত্রের  উপর। মাস্টার্স  ডিগ্রি  সম্পূর্ণ  করেছেন  যুক্তরাজ্যের  সাউথ  ব্যাংক বিশ্ববিদ্যালয় এবং গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ফামি কাজ  করেছেন  যুক্তরাজ্যের  ন্যাশনাল  ইয়ুথ ফ্লিম একাডেমিতে (এনওয়াইএফএ)।

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে চলচ্চিত্র নির্মাণের কৌশলেও এসেছে পরিবর্তন। নির্বাক যুগের  চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা হতো ১৬  ফ্রেম। বর্তমানে  চলচ্চিত্রে  ব্যবহার করা  হচ্ছে  ২৮  ফ্রেম। এই ফ্রেমের পরিবর্তনের পরিক্রমার সাথে দর্শকের  প্রত্যেকটি দৃশ্য অনুভব করার প্রক্রিয়ার  মধ্যেও পরিবর্তন এসেছে। একমাত্রিক থেকে দ্বিমাত্রিক, তারপর  দ্বিমাত্রিক থেকে  ত্রিমাত্রিক। এখন  চতুর্থমাত্রিক আয়তনের মাধ্যমে চলচ্চিত্র অনুভব করা যায়। 

চমক লাগানোর মতো আরেকটি প্রযুক্তি টেক বিশ্ব রাজত্ব করছে। প্রথমে শুধু ভিডিও গেমস এর এই প্রযুক্তিদেখা যেত। এখন চলচ্চিত্র, জাদুঘরেও এই প্রযুক্তির অনুকরণে করা হচ্ছে।এই প্রযুক্তিকে বলা হয় ‘ভার্চুয়াল রিয়ালিটি।’ ভার্চুয়াল রিয়ালিটি বা ভিআর এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে দর্শকেরা দৃশ্যগুলো ৩৬০ ডিগ্রি কোণে উপভোগ করতে পারেন । ভিআর হলো দৃষ্টিগত বিষয় এবং এটি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য। এর সাথে রয়েছে চলচ্চিত্রের প্রতিটি মুহুর্তকে জীবন্ত অনুভব করা। মনে হয়, দর্শকই ঐ মুহূর্তেই অবস্থান করছে।

স্মৃতি ফামি তার ‘ভার্চুয়াল রিয়েলিটি উইথ সিনেমা টেকনিক অ্যান্ড স্টোরি টেলিং’ গ্রন্থে ৯টি অধ্যায়ের মাধ্যমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সম্পর্কে ধারণা, এর ইতিহাস, গবেষণায় ভিআর, ব্রিটিশ  চলচ্চিত্রের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা, হলিউডের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা এবং ভিআর এর জন্য গল্প বর্ণনা করার ধরণ নিয়ে আলোচনা করেছেন।

বইটিতে স্মৃতি ফামি থ্রি ডি ও রিয়েল থ্রি ডি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ২০০৯ সালে নির্মিত ডেভিড ক্যামেরুন পরিচালিত অ্যাভাটার নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন। অ্যাভাটার চলচ্চিত্রতে বাস্তব জীবনের সাথে পরবাস্তব জীবনের সম্পর্ক নিয়ে ব্যবচ্ছেদ করেছেন তিনি। এই চলচ্চিত্রটি যখন ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রযুক্তিতে দেখা যায়, তখন এটি অন্য একটি দুনিয়ায় নিয়ে যায় দর্শকদের। দর্শক প্রত্যেকটি চরিত্রকে স্পর্শ করতে পারে, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল দিয়ে দেখতে পারে- যেটি অনেক প্রশস্ত অন্যান্য মাধ্যমের চাইতে। স্মৃতি ফামি অ্যাভাটারের কাল্পনিক বাস্তবতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘এটি আমরা যা দেখি তা নয়, বরং তার চেয়ে বেশি গভীর।’

ব্রিটিশ চলচ্চিত্র সম্পর্কে ফামি বলেন, ৬০ এর দশকে বিভিন্ন ধরনের থ্রিলার অবলম্বনে ব্রিটিশ চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হতো। চকলেট (২০০০), এইজ অব আদালিন (২০১৫), দ্য স্টোরি অব অড্রে হেপবার্ণ (২০০০) চলচ্চিত্রের ভিজ্যুয়াল নিয়ে এসবের সিনেমাটোগ্রাফি, স্টোরি টেলিং সম্পর্কে আলোচনা করেন।

বইটির শেষের অধ্যায়ে স্মৃতি ফামি ভি আর এবং গতানুগতিক গল্প বলার ধরণ সম্পর্কে ব্যাখা করেন। তিনি বলেন, এ দুটোর মধ্যে মূল পার্থক্য হলো এদের গল্প অনুভব করার ধরণ, এদের ত্রি মাত্রিক ও চতুর্থমাত্রিক ডাইমেনশন।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি উইথ সিনেমা টেকনিক অ্যান্ড স্টোরি টেলিং বইটি প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের গ্রসভেনার হাউজ পাবলিশিং লিমিটেড।