যাত্রাপথে বমি বা মোশন সিকনেস প্রতিরোধে করণীয়

ঈদযাত্রার আনন্দটাই মাটি হয়ে যায় মোশন সিকনেসের কারণে। যাত্রাপথে অনেকেরই মোশন সিকনেস বা মাথা ঘুরানো ও বমির সমস্যা দেখা দেয়। কারোর আবার মাথা ব্যথা বা বমি ভাব হয়। এই সমস্যাকে মেডিক্যালের ভাষায় বলা হয় মোশন সিকনেস। তবে আশার কথা হচ্ছে, এই সমস্যা থেকে চাইলেই সুস্থ থাকা সম্ভব এবং এর চিকিৎসা সম্ভব। অনেকেই অবহেলা করেন অথবা সঠিক পরামর্শ পান না। যার ফলে দীর্ঘদিন এরকম সমস্যা নিয়েই যাতায়াত করেন। কেউ কেউ দূরের যাত্রাকে ভয় পান।

 

কিছু বিষয় খেয়াল করলে এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে এই সমস্যা খুব সহজে এড়িয়ে চলা যায়। গতি ও জড়তার ফলে মস্তিষ্কে সমন্বয়হীনতার বাহনগুলোতে বমির সমস্যা হতে পারে। অন্তঃকর্ণ আমাদের শরীরের গতি ও জড়তার ভারসাম্য রক্ষা করে। যখন কেউ কোনও যানবাহনে চলাফেরা করেন তখন অন্তঃকর্ণ মস্তিষ্কে খবর পাঠায় যে সে গতিশীল। তবে চোখ বলে ভিন্ন কথা। কারণ, তার সামনের বা পাশের মানুষগুলো কিংবা গাড়ির সিটগুলো থাকে স্থির। আমাদের চোখ আর অন্তঃকর্ণের এই সমন্বয়হীনতার কারণে মোশন সিকনেস হয়।

এছাড়াও অ্যাসিডিটি, অসুস্থতা কিংবা গাড়ির ধোঁয়া কিংবা বাজে গন্ধের কারণেও গাড়িতে বমি হতে পারে। 

মোশন সিকনেস প্রতিরোধে করণীয়

  • যাদের এই সমস্যা আছে তারা চেষ্টা করবেন যেদিকে গাড়ি চলে তার উল্টো দিকের সিটে না বসতে। কারণ, উল্টো দিকে বসলে বমিভাব বেশি হতে পারে।
  • চেষ্টা করবেন গাড়ির সামনের দিকে বসার। কারণ, পেছনে বসলে গাড়িকে বেশি গতিশীল মনে হয়, যার ফলে দ্রুত ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং মোশন সিকনেস দেখা যায়।
  • চেষ্টা করবেন জানালার পাশে বসার এবং জানালা খোলা রাখার। এসি পরিবহন হলে এক্ষেত্রে অবশ্য কিছু করার নেই। আর জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকার চেষ্টা করুন, এতে মোশন সিকনেস হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
  • বমি করার কথা চিন্তা করবেন না, এতে বমির ট্রিগার হতে পারে। আপনার সঙ্গে কেউ সহযাত্রী থাকলে গল্প করুন, কথা বলুন। তবে খেয়াল রাখবেন অবশ্যই যাত্রাপথে কারও দেওয়া কোনও খাবার খাবেন না। এতে বিপদ হতে পারে এবং আপনার যাত্রা অনিরাপদ হয়ে যেতে পারে।
  • চোখ বন্ধ রাখতে পারেন কিংবা ঘুমিয়ে যেতে পারেন। যাত্রার আগের দিন ঠিকমতো ঘুম হওয়াও জরুরি। অনেক সময় ঠিকভাবে ঘুম না হওয়ার কারণে মাথাব্যথা ও বমি হতে পারে।
  • গাড়িতে ওঠার আগে হালকা কিছু নাস্তা খেতে পারেন। কখনোই খালি পেটে ভ্রমণ করবেন না। ভ্রমণের আগে বেশি খাবার খাবেন না। যাত্রাপথে যত কম খাবেন, তত ভালো।
  • বমি ভাব দূর করার জন্য আদা, লেবু, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেঁতুল চাটনি, আচার, কমলা বা টক জাতীয় যেকোনও ফল সাথে রাখতে পারেন। লেবু পাতাও সাথে রাখা যেতে পারে। এর সুঘ্রাণ বমি ভাব দূর করে।
  • চুইংগাম, লজেন্স খেতে পারেন। এতে বমি ভাব হবে না।

জেনে নিন
বমি রোধে কিছু সাধারণ ওষুধ সাথে রাখতে পারেন। বাজারে জয়ট্রিপ নামের এক ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। অথবা অনডেনসেট্রন জাতীয় ওষুধ গাড়িতে উঠার আগে এবং খাবার আগে খেয়ে নিতে পারেন। ডমপেরিডন জাতীয় ওষুধও খাওয়া যেতে পারে তবে এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মেডিসিন গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত বা অযথা বমির ট্যাবলেট খেলে বিপদ এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে। যারা মোশন সিকনেস নিয়ে খুব বেশি সমস্যায় আছেন এবং বারবার এ রকম সমস্যা হচ্ছে, তাদের উচিত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দূরের পথে যাত্রা করা এবং চিকিৎসার মধ্যে থেকে এই সমস্যা থেকে ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠা। যাত্রা পথে খোলা খাবার গ্রহণ করবেন না। 

লেখক

জনস্বাস্থ্য গবেষক ও চিকিৎসক 
উপ-পরিচালক, সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্স অ্যান্ড রিসার্চ