ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত সারাক্ষণই ক্লান্ত লাগে অনেকের। সবসময়ই এক ধরনের ঘুম ঘুম ভাব হয় এবং কোনও কাজ করতে ইচ্ছে করে না। এতে সারাদিনের কার্যক্রম ধীর গতির হয়ে পড়ে। অনেক সময় ঠিক মতো কাজ করতে না পারার কারণে মানসিক অবসাদও ঘিরে ধরে। কেন এমন হয়? বিবিসিতে প্রকাশিত একটি আর্টিকেলে ব্রিটিশ পুষ্টিবিদ কেরি টরেন্স জানাচ্ছেন বিস্তারিত।
১। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া
ঘুমের মধ্যে আমাদের শরীর এবং মস্তিষ্ক বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে। যেমন ঘুমের প্রথম ৯০ মিনিটের সময় গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে যায়। যদি আমরা সঠিক সময়ে না ঘুমাই অথবা পর্যাপ্ত না ঘুমাই, তবে ধীরে ধীরে পেশী ক্লান্ত হতে থাকবে।
২। স্ট্রেস
আমাদের সবার জীবনেই কিছু না কিছু স্ট্রেস থাকে। তবে বাড়তি মানসিক চাপ প্রভাব ফেলে আমাদের ঘুমের উপর। এতে ঘুম কম হয় এবং সারাদিন ক্লান্ত লাগে।
৩। অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করা
প্রতিদিন সকালে বা সন্ধ্যায় এক কাপ কফি আমাদের চাঙা করতে পারে। তবে এর উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা আপনাকে ক্লান্ত করে তুলতে পারে। দিনে অত্যধিক কফি খাওয়ার কারণে রাতের ঘুম কমে যেতে পারে। এতে দিনভর লাগতে পারে ক্লান্ত।
৪। পর্যাপ্ত পানি পান না করা
পর্যাপ্ত পানি ও পানিজাতীয় খাবারের অভাবে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। এতে কর্মশক্তি লোপ পায় ও ঘুম ঘুম ভাব হয়।
৫। পুষ্টির ঘাটতি
যদি আপনার ভিটামিন বি ১২, ভিটামিন ডি বা খনিজ আয়রনের মতো পুষ্টির অভাব হয়, তবে রাতে ভালো ঘুম হওয়া সত্ত্বেও সারাদিন ক্লান্ত বোধ করতে পারেন আপনি।
৬। সুষম খাদ্যাভ্যাসের অভাবে
খাদ্যতালিকায় সুষম খাবার না থাকলে শক্তির মাত্রা কমে যেতে পারে। যদি প্রোটিনের মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালোরি এবং ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট না খান, তাহলে পেশী ভাঙতে শুরু করে ও ক্লান্ত লাগে। তবে প্রচুর ক্যালোরি থাকলেও উচ্চমাত্রায় চিনি আছে এমন খাবার খাবেন না। গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ক্যালোরিগুলো উল্টো আমাদের শক্তি উৎপাদনে বাধা দেয় এবং আমাদের খাওয়া অন্যান্য খাবার থেকে পুষ্টি হ্রাস করে। এতে আরও বেশি ক্লান্ত লাগে।
৭। বাড়তি ওজনের কারণে
উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী অতিরিক্ত ওজন থাকলে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটি স্লিপ অ্যাপনিয়াসহ অন্যান্য রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই বাড়তি ওজনের কারণে ক্রমাগত ক্লান্ত লাগতে পারে।
৮। নির্দিষ্ট কোনও রোগের কারণে
ক্লান্ত লাগার সঙ্গে একাধিক শারীরিক অসুস্থতা জড়িত। এর মধ্যে রয়েছে হাইপোথাইরয়েডিজম বা দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি। এই পরিস্থিতিতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
জেনে নিন
- ২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এক টানা ক্লান্ত লাগলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- ক্লান্ত লাগার পাশাপাশি ওজন কমে যাওয়া বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিন।
- পুষ্টিকর খাবার সুষমভাবে রাখুন খাদ্য তালিকায়।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।