প্রশ্ন: আমার ছেলে ক্লাস টেনে পড়ে। বর্তমানে প্রি টেস্ট পরীক্ষা দিচ্ছে। সে লাইভ অনলাইন গেমের প্রতি আসক্ত। বিশেষ করে করোনাকালীন সময় থেকে এর প্রতি আকৃষ্ট হয়। সারারাত জেগে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে দিনে পরীক্ষা দিয়ে এসে ঘুমায়। সন্ধ্যায় ডেকে ঘুম থেকে তুলতে হয়। খাওয়া দাওয়ায়, লেখাপড়ায় অনিয়ম। সারারাত গেম নিয়ে ব্যস্ত থাকে, বাধা দিলে রিঅ্যাক্ট করে। এমনকি নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ারও হুমকি দেয়। তাই খুব একটা রাগারাগি করি না। বর্তমানে পিসিতে না বসে সারারাত মোবাইল ফোন কানের কাছে নিয়ে ঘুমায়। বাথরুমে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটায়। প্যান্টের পকেটে মোবাইল ফোন থাকে। কোনও কথা বা উপদেশ-নির্দেশ শোনে না। সারাক্ষণ বিষণ্ণতায় ভুগছে মনে হয়। আমি এখন কী করতে পারি?
উত্তর: আপনার বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে, বর্তমানে আপনার ছেলের মোবাইল ফোন এবং গেমে আসক্তির মাত্রা গুরুতর। এ পর্য়ায়ে তাকে দ্রুত একজন দক্ষ মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আপনার সন্তানের মধ্যে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট বা গেমে আসক্তির মাত্রা যদি স্বল্প বা মাঝামাঝি পর্যায়ের হতো; তবে আপনাকে আমি নিচের পরামর্শগুলো অনুসরণ করতে বলতাম-
১। সময়সূচি নির্ধারণ: আপনার ছেলের সাথে কথা বলুন এবং তার সময়সূচি তৈরি করতে সাহায্য করুন। তার দৈনন্দিন কাজ, পড়াশোনা, খেলাধুলা, এবং অবসর সময় নির্ধারণ করুন। তবে এটা বড়দের তুলনায় ছোটদের ক্ষেত্রে অধিক কার্যকর।
২। খেলাধুলায় উৎসাহ দেওয়া: আপনার ছেলেকে বন্ধুদের সাথে বা বিভিন্ন গ্রুপের সাথে বাইরের খেলাধুলায় উৎসাহ দিন। তাকে সাইক্লিং, স্কেটিং, ট্রেকিং ইত্যাদি চর্চার জন্য উৎসাহ দিন। মিউজিক, বাদ্যযন্ত্র, ডিবেটিং, কোরআন তেলাওয়াত, যার যেটা পছন্দ তাকে সে বিষয়ে উৎসাহ দিন।
৩। সামাজিক যোগাযোগ: আপনার ছেলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করুন। তাকে বন্ধুদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ করতে উৎসাহিত করুন।
৪। মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শকের সাথে কথা বলুন: আপনার ছেলের জন্য একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা পেশাদারের কাউন্সেলরের সাথে কথা বলার ব্যাপারে বিচার করুন।
৫। পারিবারিক বন্ধুত্ব: আপনার ছেলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্হাপন করুন। পরিবারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তাকে সম্পৃক্ত করুন, সাথে রাখুন। বাবা-মা দুজনকেই এ বিষয়ে যত্নবান হতে হবে।
৬। সমর্থন দিন: আপনার ছেলের প্রতি সমর্থন দিন এবং তাকে বুঝিয়ে দিন যে আপনি তার পাশে আছেন।
প্রশ্ন: দীর্ঘমেয়াদি হতাশার সমাধান কী?
উত্তর: দীর্ঘমেয়াদি হতাশার সমাধানের জন্য আপনাকে কিছু পরামর্শ দিতে পারি।
১। সময় দিয়ে আত্মচিন্তা করুন: আপনার মনের চাপ ও হতাশার কারণ চিন্তা করুন। এটি সমাধানের প্রথম ধাপ।
২। সমর্থন খুঁজুন: পরিবার, বন্ধু, জন্মাণ্ডল বা পেশাদার সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করুন। এই সমর্থন আপনাকে হতাশা মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
৩। চিকিৎসা পেতে চিন্তা করুন: যদি আপনি মনে করেন যে আপনার হতাশা দীর্ঘমেয়াদী এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তাহলে একজন মানসিক চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করার চিন্তা করুন।
৪। ধারণা পরিবর্তন করুন: নেগেটিভ চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে পজিটিভ এবং কন্ট্রোল করা যায় এমন চিন্তা চর্চা করুন।
৫। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করুন: নিয়মিত ব্যায়াম, সুস্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
৬। স্ট্রেস হ্রাসের উপায় শিখুন: ধ্যান, প্রাণায়াম, সংগীত শুনুন বা কার্যক্রম চর্চা করুন যা আপনাকে শান্তি ও স্বাস্থ্যকর মনোভাব দেবে।
৭. ব্রিদিং এক্সারসাইজ: শ্বাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। শ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে গভীর শ্বাস নিন। তারপর মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে শ্বাস ধরে রাখুন। সবশেষে মনে মনে ১-২-৩-৪-৫-৬ গুনতে গুনতে পেট ভেতর দিকে টেনে নাক দিয়েই ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। যখনই মনে হবে তখন একটানা কয়েকবার এরকম করুন। সবশেষে, এটি স্মরণ করুন যে হতাশা স্বাভাবিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যর অংশ। যথাসাধ্য সাহায্য খুঁজে নিন এবং পরামর্শের জন্য একজন পেশাদারের সাথে যোগাযোগ করার চিন্তা করুন।