চলছে আমের মৌসুম। নানা জাতের রসালো আম এখন মিলছে বাজারে। আম-দুধ, আম-রুটি বা আম-মুড়ি খাওয়ার ধুম পড়েছে বাসায় বাসায়। তবে অনেকেই দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন আম খাওয়ার বিষয়ে। আম খেলে ওজন বাড়ে- এমন ধারণা রয়েছে অনেকের মধ্যেই। কেউ কেউ মনে করেন আম খেলে প্রচুর ঘুম হয়, তাই ওজন বেড়ে যায়। আবার অনেকে মনে করেন ডায়াবেটিস থাকলে বুঝি আম একেবারেই খাওয়া যাবে না। এই ধারণাগুলো কি সঠিক? জেনে নিন সেটাই।
১। আম খেলে কি ঘুম পায়?
আম খাওয়ার সঙ্গে ঘুমের আসলেই যোগসূত্র রয়েছে। পাকা আমে আছে প্রচুর পরিমাণে ট্রিপটোফ্যান নামের অ্যামিনো অ্যাসিডের উপস্থিতি, যা ঘুম আসতে সাহায্য করে। কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেলসমৃদ্ধ আম শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ায়। এই ইনসুলিন ট্রিপটোফ্যান নিঃসরণ করে মস্তিষ্কে পাঠায়। ট্রিপটোফ্যান সহজেই যেহেতু মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে পারে, সেখান থেকে তৈরি সেরোটোনিন ক্ষরণে সহায়তা করে। আর সেরোটোনিন হচ্ছে ঘুমের জন্য দায়ী একটি নিউরোট্রান্সমিটার। সেরোটোনিনের উপস্থিতি মন ভালো রাখে, মস্তিষ্ক শীতল করে। বেশি পরিমাণ ইনসুলিন নিঃসরণের কারণ হলো আমে বিদ্যমান কার্বোহাইড্রেট বা গ্লুকোজ। যত বেশি আম খাওয়া হবে, ইনসুলিনের পরিমাণ তত বৃদ্ধি পেয়ে সেরাটোনিনও বাড়তে থাকবে। এ কারণেই আম খেলে ঘুম আসে। সেরাটোনিন ক্ষরণ আরেক হরমোন মেলাটোনিনকেও ত্বরান্বিত করে। মেলাটোনিন হরমোন দেহের ঘুমের চক্রকে প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখে। এই দুই হরমোন ঘুমের সঙ্গে জড়িত। এদের কারণেই মস্তিষ্ক শীতল ও শান্ত হয়ে প্রশান্তিদায়ক অনুভূতি দেয়। ফলে ধীরে ধীরে তন্দ্রা ভাব আসে।
২। আম খেলে কি ওজন বাড়ে?
বাংলাদেশ মাল্টিকেয়ার হাসপাতাল ও ইবনেসিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারের ক্লিনিক্যাল ডায়াটিশিয়ান ও নিউট্রিশন কনসালটেন্ট ফাতেমা সিদ্দিকী ছন্দা জানান, পরিমিত আম খেলে ওজন বাড়ে না। বরং আমে থাকা পলিফেনল নামক ফাইটোকেমিক্যাল শরীরে ফ্যাট জমার প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ফ্যাট বার্ন করে যা ওজন কমায়। আম খেলে ওজন না বাড়ার আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে এতে থাকা খাদ্যআঁশ। আমে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যআঁশ আছে, কিন্তু এর ক্যালরিমূল্য কম। তাই আমকে স্ন্যাকস হিসেবে রাখলে পেট ভরা থাকবে। এতে অন্যান্য ক্যালরি বহুল খাবার খাওয়া থেকেও দূরে থাকা সম্ভব হবে।
তবে অতিরিক্ত আম খেলে ওজন বাড়বে। যখন কোনও ব্যক্তি সুষম উপায়ে খাবার খাবেন, তখন তিনি দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় দুটি আম রাখতে পারেন। এর বেশি খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার আশংকা তৈরি হয়। পাশাপাশি আম আমাদের ঘুমের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। দিনের বেলার ঘুম এমনিতেই আমাদের মেটাবলিক রেট কমিয়ে দেয় যা ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া আম খেলে ওজন বাড়বে যদি কেউ প্রক্রিয়া করে খায়। যেমন আমের শরবত, স্মুদি, আমের আইসক্রিম বা চাটনি বানিয়ে খেলে বাড়তি চিনিযুক্ত হবে এবং প্রভাব পড়বে ওজনে।
৩। ডায়াবেটিস রোগীরা কি আম খেতে পারবেন?
ফরাজি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক লিমিটেডের পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ জানান, ডায়াবেটিসের রোগী আম খেতে পারেন না, এ কথা ভুল। আম খেতে পারবেন, তবে শর্করাযুক্ত অন্যান্য খাবারের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে। যেমন সকালে অনেকেই আম রুটি বা আম চিড়া খেতে পছন্দ করেন। সকালে যদি আগে তিনটি রুটি খেতেন তবে সেখান থেকে একটি রুটি বাদ দিয়ে বা চিড়া ৩ ভাগের একভাগ কমিয়ে দিয়ে তার পরিবর্তে একটি আম খেতে পারেন। রাতে সাধারণত বলা হয় যে মিষ্টি জাতীয় ফল ডায়াবেটিস রোগীদের কম গ্রহণ করতে। কিন্তু তারপরেও অনেকেই আমের সিজনে আম দিয়ে দুধ ভাত খেতে পছন্দ করেন। তাদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ হলো, ভাতের পরিমাণ পরিমাণ কমিয়ে দিন। অর্থাৎ আগে যা ভাত খেতেন তার অর্ধেক ভাত খান এবং পাশাপাশি পরিমাণ মতো আম খান। রাতের এই খাবার শেষ করুন সন্ধ্যা রাতেই। কারণ বেশি রাতে আম খেলে ক্যালোরি খরচ করার সময় পাওয়া যায় না। সকালে আম খেলে সারাদিনে নানা কাজে খরচ হয়ে যায় ক্যালোরি। রাতের খাবার শেষে ১ ঘন্টা পর একটু বেশি সময় হেঁটে নিতে হবে, তাহলে আম খেলেও হবে না সমস্যা। পাকা আম একজন ডায়াবেটিস রোগী দৈনিক ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম খেতে পারেন। মানে প্রতিদিন একটি ছোট আম বা অর্ধেকটা মাঝারি আম খাওয়া যাবে।