‘আরবি পড়াতে আসা শিক্ষকের কাছে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম’

প্রশ্ন: আমি ছোটবেলায় সুস্থ পরিবেশ পাইনি। এর ফলে বেশ কিছু ট্রমা কাজ করে আমার মধ্যে। আমার আত্নবিশ্বাসের অভাব রয়েছে, আমি সহজে কারোর সঙ্গে মিশতে পারি না। এসব কারণে কর্মক্ষেত্রেও নানা ধরনের ঝামেলায় পড়তে হয়। এছাড়া ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এখনও আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। যেমন আরবি পড়াতে আসা শিক্ষকের কাছে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম। বাবা মাকে বিষয়টি জানালেও তারা পাত্তা দেয়নি, বরং হেসে উড়িয়ে দিয়েছে। এগুলো এখন পর্যন্ত আমি ভুলতে পারি না। কীভাবে স্বাভাবিক হবো আমি? 

উত্তর: ছোটবেলার ট্রমার কারণে পরবর্তী জীবনে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিসহ বেশ কিছু মনোদৈহিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। আপনার মনের জোর বেশি হওয়ার কারণে আপনার আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে, এ ব্যপারে আপনি নিশ্চিত থাকুন। অতীতের নেতিবাচক প্রভাব কাটাতে নিচের পরামর্শগুলো অনুসরণ করুন-

১. দৈনন্দিন রুটিন: প্রতিদিনের কাজের তালিকা তৈরি করে ধীরে ধীরে আপনার পড়াশোনা ও জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান।
২. স্বাস্থ্যকর জীবনধারা: নিয়মিত ব্যায়াম করুন, সঠিক পুষ্টি সম্পন্ন খাদ্য নির্বাচন করুন এবং যথেষ্ট ঘুম নিশ্চিত করুন।
৩. নিজের জন্য সময় নিন: আপনার মনোবল ফিরিয়ে আনার প্রথম ধাপ হলো নিজের জন্য সময় নেওয়া। শান্তিপূর্ণ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকুন।
৪. লক্ষ্য নির্ধারণ ও পরিকল্পনা: জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং তাকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে নিন। প্রতিটি অংশের জন্য আলাদা সময় নির্ধারন করুন।
৫. আত্মবিশ্বাস: নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন। পরাজয় ও সফলতা জীবনের অংশ। প্রতিদিন নিজেকে ভালোবাসার এবং পড়াশোনায় সাফল্যের মেসেজ দিন।
৬. পরামর্শ নেওয়া: যদি প্রয়োজন হয়, শিক্ষা বিষয়ক পরামর্শ নিন। এটি আপনার সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে।
৭. স্ট্রেস পরিচালনা: স্ট্রেস পরিচালনা শিখুন। যোগা, ধ্যান, দীর্ঘশ্বাস নেওয়া ইত্যাদি পদ্ধতির মাধ্যমে মনোবল বাড়ান।

এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে আপনি সম্ভবত হারানো মনোবল ফিরিয়ে আনতে পারবেন। তবে, যদি সমস্যার সমাধান না হয় হবে একজন কাউন্সেলরের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। 

প্রশ্ন: আমার প্রেমিকা আমাকে অকারণে সন্দেহ করে। সোশ্যাল মিডিয়ার পাসওয়ার্ড চায়। আমি দিতে না চাইলে বলে আমি অন্য কারোর সঙ্গে প্রেম করি এজন্য দিচ্ছি না। কীভাবে ব্যাপারটা সামলাবো বুঝতে পারছি না।

উত্তর: পাশ্চাত্য সমাজে পাসওয়ার্ড চাওয়াটা অত্যন্ত অভদ্রোচিত আচরণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে আমাদের সমাজে বর্তমানে পারস্পারিক বিশ্বস্ততা আশংকাজনকভাবে কমে যাওয়ার কারণে সঙ্গীকে অকারণে সন্দেহ করা এবং তার সোশ্যাল মিডিয়ার পাসওয়ার্ড চাওয়া একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনার প্রেমিকার নিজের বা তার কোন আপনজনের অতীত জীবনে কারোর দ্বারা বিশ্বাসভঙ্গের ঘটনা ঘটে থাকলে উনার মধ্যে আপনাকে নিয়ে সন্দেহপ্রবণতা তৈরি হতে পারে। তবে অন্যের বা অন্যান্য বিষয়েও তার সন্দেহপ্রবণতা আছে কিনা তা লক্ষ করতে হবে। সন্দেহপ্রবণতা কারোর ব্যক্তিত্বের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিদ্যমান থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার প্রেমিকার কাউন্সেলিং প্রয়োজন। আবার বিশেষ ধরনের মনোরোগের কারণেও সন্দেহপ্রবনতা তৈরি হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার প্রেমিকাকে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ওনাকে মৃদু অ্যান্টিসাইকোটিক মেডিসিন খেতে হতে পারে অথবা নন-ইনভেসিভ ফিজিওথেরাপি নিতে হতে পারে। তাছাড়া আপনার প্রেমিকার মানসিক দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করুন। উনি আত্ম-সহায়তা বই, মনোযোগ বা নিঃস্বাসের ব্যায়াম, অন্যান্য ব্যায়াম, সাঁতার, ইয়োগা এবং মেডিটেশনের মাধ্যমে এটি করতে পারেন।