কফি খাওয়ার উপযুক্ত সময় কোনটা?

বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় পানীয়গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে কফি। অনেকে সকালে ঘুম থেকে উঠেই কফির মগে চুমুক দিতে ভালোবাসেন। তবে সকালে উঠেই কফি পান করার আসক্তি স্বাস্থ্যকর কি না এবং এটি শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আবার সন্ধ্যার পর কফি খেলে অনেকের রাতে ঘুম আসতে চায় না। কফি পান করার সময়টা শারীরিক ক্রিয়াকলাপের উপর প্রভাব ফেলতে পারে ব্যাপকভাবে। জেনে নিন কখন কফি পান করবেন, কখন করবেন না। 

 

কফি এবং প্রাকৃতিক চক্র
কখন ঘুমাতে হবে, কখন ঘুম থেকে উঠতে হবে এবং কখন সবচেয়ে বেশি শক্তি থাকবে তা আংশিকভাবে নির্ধারিত করে শরীরের নিজস্ব ঘড়ি, আংশিক নির্ধারণ করেন আপনি নিজেই। শরীরের স্বাভাবিক ২৪ ঘন্টা চক্র সার্কাডিয়ান রিদম নামেও পরিচিত। এটি ঘুম-জাগানোর ধরণ এবং হরমোন নিঃসরণকে প্রভাবিত করে। আপনি যদি সন্ধ্যায় বা ঘুমানোর আগে কফি পান করেন, তবে সেটা আপনার ঘুমের সময়সূচীকে এলোমেলো করে দিতে পারে। এতে সার্কাডিয়ান রিদম ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। কফির সাথে প্রাণশক্তি আসে এবং শক্তির ব্যবহার না করায় আসে অস্থিরতা। তাই সন্ধ্যার পর কফির মগে চুমুক না দেওয়াটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। 

কর্টিসলের মাত্রা
আমাদের শরীরের 'স্ট্রেস হরমোন' হচ্ছে কর্টিসল। ভোরবেলা এটি তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। কর্টিসল আপনার শক্তির স্তরের পাশাপাশি সারাদিনের চাপের মাত্রা নির্ধারণ করে। আপনি যদি ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন, তাহলে সকাল নয়টা বা সাড়ে নয়টার পর থেকে কর্টিসল কমতে শুরু করে।এরপর আপনি অলস বোধ করতে শুরু করতে পারেন। এ সময় হাতে নিতে পারেন এক মগ গরম কফি। এতে শরীরের প্রাকৃতিক শক্তিতে হস্তক্ষেপ করছেন না আপনি।

মধ্যাহ্নে কফি 
মধ্যাহ্নের কাছাকাছি, দুপুর একটা থেকে তিনটার মধ্যে কফি খেতে পারেন। এতে মধ্যাহ্নভোজের পরবর্তী অলসতা কাটবে। এতে এটি ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে। যদিও এই সময়ের মধ্যে পরিমিত পরিমাণে কফি পান শক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে, তবুও মগ ভর্তি করে কফি না খেতেই ভালো করবেন। কারণ তিনটার সময় বড় মগ ভর্তি করে কফি খেলে রাতের ঘুমে প্রভাব পড়তে পারে। 

শেষ বিকেলে কফির কাপ
শেষ বিকেলে বা সন্ধ্যার প্রথম দিকে কফি খেলে ঘুমের উপর প্রভাব পড়তে পারে। এটি রাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে যখন আপনি ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। যেহেতু ক্যাফিনের প্রতি সংবেদনশীলতা সন্ধ্যার সময় বৃদ্ধি পেতে থাকে, এটি এড়িয়ে চলাই ভালো বিকেলের পর থেকে। 

প্রি-ওয়ার্কআউট পানীয় হিসেবে কফি
কফি শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য কার্যকর। প্রোটিনের সাথে কফি যুক্ত করে কার্যকর ওয়ার্কআউট ড্রিংক হিসেবে পান করতে পারেন। এটি সর্বোত্তম শক্তির মাত্রা দেবে নিশ্চিতভাবে। তবে সন্ধ্যার সময় প্রি-ওয়ার্কআউট এবং ওয়ার্কআউট পানীয় হিসেবে কফি পান করলে কী ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে? ঘুমের চক্রকে ব্যাহত না করতে ফিটনেস সেশন শুরু করার ৩০ থেকে ৬০ মিনিট আগে প্রি-ওয়ার্কআউট পানীয় হিসেবে কফি পান করতে পারেন। যাতে সঠিক এই শক্তি আপনি বায়ামের মাধ্যমে পুরোপুরি ক্ষয় করতে পারেন।  

তাহলে কফি পান করার সঠিক সময় কোনটা? এটা আসলে আপনার উপরেই নির্ভর করে। আপনি যদি নাইট শিফটে কাজ করেন এবং সকাল ৮টার দিকে ঘুমান, রাত ৯টায় এক কাপ কফি খান এবং কাজ করুন। যদি প্রাক-ওয়ার্কআউট পানীয় হিসেবে কফির প্রয়োজন হয়, তবে ব্যায়াম শুরুর এক ঘণ্টা বা তার আগে একটি শট পান করুন। আপনার যদি সকাল ৭টায় ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস থাকে, তবে এক বা দুই ঘন্টা অপেক্ষা করে তারপর পান করুন কফি। 

তথ্য: টাইমস অব ইন্ডিয়া