‘আমি গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে চাই’

প্রশ্ন: আমার বয়স ২৫ বছর। তিন বছর আগে বিয়ে করি নিজের পছন্দে। এখন আমি অন্তঃসত্ত্বা চার মাসের। সম্প্রতি জানতে পারি স্বামী পরকীয়ায় জড়িয়েছে। আমি গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে চাই। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন এই মুহূর্তে গর্ভপাত করানোটা আমার জন্য ঝুঁকির কারণ হবে। আমি বাবার বাসায় চলে এসেছি। হয়তো ডিভোর্স দিয়ে দেবো স্বামীকে। এখন সন্তানকে আমার বোঝা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সন্তানকে জন্ম দিলেও সারাজীবন ওকে ভালোবাসতে পারবো না। বাচ্চার প্রতি অবিচার করা হবে।

উত্তর: সন্তান গর্ভে থাকার কারণে শরীরে বিভিন্ন হরমোনের মাত্রা পরিবর্তন হয়। এ কারণে অনেক সময় ইমোশনাল ডিস্ট্রেস তৈরি হতে পারে। আমাদের পারিপার্শ্বের উপর সবসময় আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে লাভ নেই। আপনার গর্ভের সন্তান নিয়ে আপনার মধ্যে যে জটিল চিন্তাভাবনা তৈরি হয়েছে সেটা সাময়িক। এগুলোকে জোর করে সরানোর চেষ্টা করার বা এজন্য নিজেকে দায়ী মনে করার কোনও কারণ নেই। জীবনের গতিপথ প্রাকৃতিক নিয়মেই আঁকাবাঁকা। আমরা সবকিছু নিয়ে সরলরৈখিক চিন্তা করি ইউক্লিডের জ্যামিতির মতো। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বাস্তবতাকে আপাতদৃষ্টিতে এলোমেলো অর্থহীন নৈরাজ্যমূলক মনে হলেও এর মধ্যে একটা ছন্দ আছে (বাটারফ্লাই ইফেক্ট অব কেওস) যা আপনি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে ভবিষ্যতে বুঝতে পারবেন। এখন আপনার মানসিক অস্থিরতার জন্য জোর করে কিছু করার চেষ্টা করে আপনার একার পক্ষে কোনও লাভ হবে না। আপনাকে প্রফেশনাল কারোর শরণাপন্ন হতে হবে।

প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৪ বছর। ব্যবসার জন্য লোন নিয়েছিলাম। ব্যবসাটা ঠিক মতো চালাতে পারিনি। এখন দেনার দায়ে জর্জরিত অবস্থায় আছি। উঠে দাঁড়ানোর কোনও উপায় পাচ্ছি না। বাবার সম্পত্তির ভাগ আমার ৩ ভাই আমাকে না দিয়েই নিয়ে নিয়েছে। সেটা নিয়েও মামলা চলছে। সব মিলিয়ে মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। কী করবো?

উত্তর: আমাদের সবাইকেই জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে এরকম কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এ রকম স্থবিরতার মধ্য দিয়ে আপনার জীবনের এ পর্যায়ে এভাবে যাওয়াটা আপনার জন্য প্রাকৃতিকভাবেই নির্ধারিত ছিল। এটা আপনার জীবনপ্রবাহের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আপনি আপনার মন কী বলে সেটা শুনুন। নিজের উপর জোর খাটাবেন না। নিজের সকল আবেগ অনুভূতিকে যেটা যেরকম সেটা সেরকমভাবেই আপন করে নিন। তাহলে আপনার ক্ষোভ, জেদ, বিরক্তি, ঘৃণা এসব আপনার বশীভূত হয়ে যাবে। এখন যে কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা না করে আত্মস্থ করার চেষ্টা করুন, নিজেকে সান্ত্বনা বা মিথ্যা আশ্বাস না দিয়ে কষ্টকে আপন করে নিতে পারলে আপনার সহনশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং একদিন আপনার এই কষ্টকর অবস্থাকে অসম সাহসিকতা এবং ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার মাধ্যমে অন্যদেরকে অনুপ্রাণিত করতে পারবেন। আজকের অবিচল আস্থার জন্য ভবিষ্যতে নিজের প্রতি, প্রকৃতির প্রতি, স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন।