‘আমি এমন একজনের সঙ্গে প্রেম করি যার সংসার আছে’

প্রশ্ন: আমার বয়স ৪০ বছর। আমার নিজেকে একজন ব্যর্থ মানুষ মনে হয়। এই বয়সে আমার সমসাময়িক সবাই স্ত্রী, সন্তান নিয়ে সুখে আছে। টাকা জমিয়েছে, সম্পত্তি করেছে। আর আমি নানা টানাপোড়েনে বিপর্যস্ত। দিন আনি দিন খাই চাকরি করি। বিয়ে করতে পারিনি ক্যারিয়ার ভালো না বলে। বাবা মায়ের সাথে সম্পর্ক ভালো না। জীবনে আমার বলে কেউ নেই আসলে। এই জীবন বয়ে বেড়াতে বড় ক্লান্ত লাগে।

উত্তর: পৃথিবীতে আপনার মতো অনেক মানুষই নিজেদেরকে আশেপাশের পরিচিত মানুষ কিংবা বন্ধুবান্ধবদের সাথে তুলনা করে ব্যর্থ মনে করে। ব্যর্থতার সংজ্ঞা তাদের কাছে ইঁদুর-দৌঁড়ে পিছিয়ে পড়াটা। আপনি এই মুহূর্তে যে অস্তিত্বের সংকটে ভুগছেন এর প্রধান কারণ হলো প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা যা আমাদেরকে কিছু ভুল জিনিস শিখিয়েছে। যেমন জীবন মানেই প্রতিযোগিতা, জীবনে বেঁচে থাকতে হলে সব সময় ইঁদুর-দৌঁড় দৌঁড়াতে হবে, বর্তমানকে জলাঞ্জলি দিয়ে ভবিষ্যৎ সাফল্যের সোনার হরিণের পেছনে ছুটতে হবে, ভবিষ্যতের জন্য আরও আরও কিছু সংগ্রহ করতে হবে। এসব শিক্ষা আমাদের প্রতিভাকে ধ্বংস করে দেয়। আমাদেরকে আত্মবিশ্বাসহীন দাসত্ব-দাস মানসিকতার জীবন্মৃত না-মানুষ তৈরি করে। আপনি এরকম একজন মানুষ। তাই আপনার জীবনের লক্ষ্য ইঁদুর-দৌড়ের ইঁদুরের চাইতে বেশী নয়। তবে আপনার ভেতরে পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে বলে আপনি আমাদের কাছে এই প্রশ্নটি করেছেন। এর উত্তর খুব সহজ। নিজেকে ইঁদুর-চিন্তা থেকে টেনে বের করে আনতে হবে। রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে বসে থাকা কর্মক্লান্ত মানুষের অভিযোগহীন অভিব্যক্তি থেকে, একজন সবজি-বিক্রেতার হাসিমুখ থেকে শিক্ষা নিন। জীবনের বর্তমান মুহূর্তে নিজেকে পরিপূর্ণ মনে না করতে পারলে ভবিষ্যতে কখনোই তা পারবেন না। নিজেকে কীভাবে পরিপূর্ণ মনে করবেন বিস্তারিত জানতে আমার পূর্বপ্রকাশিত প্রশ্নোত্তরগুলো দেখুন।

প্রশ্ন: আমার বয়স ৩০ বছর। আমি এমন একজনের সঙ্গে প্রেম করি যার সংসার আছে। স্ত্রী, সন্তান আছে। আমাকে বলেছিল সে সংসারে সুখী না। এজন্য আমি জড়িয়েছিলাম। কিন্তু সে স্ত্রীকে ডিভোর্স দেবে দেবে করেও ৩ বছর চলে গেছে। তার স্ত্রী আমাদের ব্যাপারে জেনেছে, কিন্তু মাফ করে দিয়ে থেকে গেছে। আমাদের আবারও যোগাযোগ হয়েছে। আবারও একই কথা বলেছে সে খুব শিগগিরই ডিভোর্স দিবে। আমি চাইলেও এই ফাঁদ থেকে বের হতে পারছি না। কী করব?

উত্তর: আপনি এই ফাঁদ থেকে বের হতে পারছেন না কারণ আপনি এ থেকে বের হতে চাইছেন না। যাদের মধ্যে ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা বেশি, আটপৌঢ়ে সম্পর্কগুলো বোরিং, যাদের এড্রেনালিন রাশ বেশি না হলে জীবন একঘেঁয়ে, যারা নীতি-নৈতিকতার নিজস্ব সংজ্ঞা তৈরি করে তাকে প্রয়োজনমতো পাল্টে নেয়, যাদের অনেকে উচ্চাভিলাষী, অনেকে স্রেফ অ্যাডভেঞ্চারাস, তারা সাধারণত এ ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। আপনার এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনি উদ্বিগ্ন কারণ আপনার প্রেমিক তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দেবে কিনা সেটা নিশ্চিত নয়। আমরা চাইলেই আমাদের প্রকৃতি পাল্টাতে পারবো না। সুতরাং সে চেষ্টা না করে আপনি আপনার ইমোশনাল এক্সেপটেন্স-এর দিকে মনযোগী হোন।