মনকে প্রশান্ত রাখতে যা করবেন

কখনও মন খারাপ হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া সম্ভব? এক কথায় উত্তর হতে পারে, না। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সমাজিক, রাষ্ট্রীয় এমনকি বৈশ্বিক যে কোনও সমস্যা আমাদের মন খারাপের কারণ হতে পারে। তবে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে আমাদের মন ভালো থাকা কিন্তু খুব জরুরি। প্রশান্ত মন আমাদের সুখের অনুভূতি দিতে পারে, বাড়াতে পারে কর্মোদ্দীপনা। আর কর্মমুখর জীবনই মানুষকে রাখে আনন্দিত ও সুখী। বিভিন্ন উপয়ে আমরা মনকে প্রশান্ত রাখতে পারি। জেনে নিন সেগুলো কী কী।

রাগ নিয়ন্ত্রণ করা
হাসি, কান্না, ভালোবাসা, ঘৃণার মতো রাগও আমাদের সহজাত একটি আবেগ। আমার সবাই কমবেশি এই আবেগের বশবর্তী হই। তবে মাত্রাতিরিক্ত রাগ আমাদের জীবনে নেতিবাচক ফলই বয়ে আনে। অনিয়ন্ত্রিত রাগ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে, সম্পর্কে ছেদ তৈরি করতে পারে। রাগ নিয়ন্ত্রণে রেখে শান্ত মনের অধিকারী হয়ে উঠতে চাইলে ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে পারেন।

নেতিবাচক চিন্তা না করা
নেতিবাচক চিন্তা আমাদের মনকে বিক্ষিপ্ত করে দেয় এবং জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলে। নেতিবাচক চিন্তা থেকে মনকে আমরা যত দূরে রাখতে পারবো মন তত ভালো থাকবে। নেতিবাচক চিন্তা মাথায় এলে সৃজনশীল কাজ করা, গান শোনা বা অন্য কোনও উপায়ে আমরা এর থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারি।

পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো
মানুষের জীবনে পরিবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যত ভালো হবে জীবন তত সুন্দর হবে। সুখী জীবনের জন্য পরিবারের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক জরুরি। পরিবারের সঙ্গে কাটানো সুন্দর সময় আমাদের মনকে প্রশান্তি দিতে পারে।

শরীরচর্চা করা
শারীরিক ও মানসকি সুস্থতার জন্যে আমাদের নিয়মিত শরীরচর্চা করা প্রয়োজন। নিয়মিত শরীরচর্চায় ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। বাড়তি মেদ ঝরে গিয়ে সুস্থ ও ঝরঝরে থাকে শরীর। শরীরচর্চায় মন প্রফুল্ল থাকে, বাড়ে কাজের আগ্রহ। শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে আমরা আমাদের মনকে প্রশান্ত রাখতে পারি।

প্রকৃতির কাছে যাওয়া
আমরা সবাই জানি সাগর, পাহাড় কিংবা ঝরনার কাছে গেলে আমাদের ভালো লাগে। কারণ প্রকৃতির স্পর্শ আমাদের মানসিক চাপ কমাতে পারে। মনতে প্রশান্ত রাখতে আমরা দিনের কিছুটা সময় সবুজ ঘাসে হাঁটতে পারি, গাছপালা ঘেরা কোনও জায়গায় বসতে পারি।

ক্লিনিক্যাল সাইকলোজিস্ট জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, মানব শরীরের অনেকগুলো হরমোনের মধ্যে চারটি মৌলিক হরমোন হলো ডোপামিন, সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন ও এন্ডোরফিন। এগুলোকে হ্যাপি হরমোন বলা হয়। শরীরে এদের মাত্রা বেড়ে গেলে মস্তিষ্ক শিথিল ও শান্ত থাকে। এতে আমরা হাসি-খুশি এবং প্রাণবন্ত থাকি। কিছু নির্দিষ্ট খাবার যেমন আমাদের শরীরে হ্যাপি হরমোনের নিঃসরণ বাড়াতে পারে, তেমনি কিছু কাজও আমাদের তাৎক্ষণিক এই হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়। যেমন ডার্ক চকলেট খেলে আমাদের মন ভালো থাকে, খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটলেও মন ফুরফুরে হয়। এছাড়া সুষম খাবার খাওয়া, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মেনে চলা, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, শখের কাজ করা ইত্যাদিও আমাদের মন ভালো রাখতে সহায়তা করে। আত্নবিশ্বাস বাড়ান, শরীরচর্চা করুন, নতুন নতুন দক্ষতার সঙ্গে পরিচিত হন, স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন। মোট কথা জীবনকে উপভোগের চেষ্টা করুন।