সন্তান নেওয়ার আগে এই ১০ বিষয় জানা জরুরি

সন্তান নেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলে কয়েক মাস আগে থেকেই কিছু প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। এতে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা যেমন বাড়ে, তেমনি মা ও সন্তানের সুস্থতার জন্যও এই কাজগুলো সাহায্য করে। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজের চিকিৎসক ও সহায় হেলথ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা  ডা. তাসনিম জারা একটি ভিডিওতে জানান, সন্তান নেওয়ার আগের প্রস্তুতি সম্পর্কে। 

  1. সুস্থ বাচ্চা জন্মদানের জন্য ফলিক অ্যাসিড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীরে ফলিক অ্যাসিডের অভাব থাকলে শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে গুরুতর ত্রুটি দেখা দিতে পারে। সন্তান পেটে আসার আগে থেকেই তাই সচেতন থাকতে হবে। সন্তান গর্ভে আসার অন্তত ১ মাস আগে থেকেই মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত ফলিক অ্যাসিড থাকা জরুরি। তাই সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ৪০০ মাইক্রোগ্রামের ফলিক অ্যাসিড খাওয়া শুরু করুন। সন্তান পেটে আসার পর ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত খান এটি। 
  2. কোনও টিকা নেওয়া বাকি থাকলে সেটা নিয়ে নিন। এতে আপনি ও সন্তান সুস্থ থাকবেন। বিশেষ করে হেপাটাইটিস বি টিকা নেওয়া না থাকলে অবশ্যই নিয়ে নেবেন। কারণ গর্ভাবস্থায় আপনার এই রোগ হলে সন্তানও আক্রান্ত হতে পারে। 
  3. অনেক নারীই আয়রনের অভাবে রক্তস্বল্পতায় ভোগেন। বিভিন্ন কারণে আয়রনের অভাব হতে পারে। গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতিতে ভুগলে সন্তানের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। চিকিৎসার মাধ্যমে রক্তস্বল্পতা পুরোপুরি দূর করা সম্ভব। তাই সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে পরীক্ষা করিয়ে নিন যে আপনি রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন কিনা। 
  4. ভিটামিন ডি আমাদের হাড়, দাঁত ও মাংসপেশির জন্য খুব জরুরি। শিশুর সঠিক গঠনের জন্যও এই ভিটামিন প্রয়োজন। তবে  আজকাল অনেকেই ভিটামিন ডি এর ঘাটতিতে ভোগেন। ২০১১-১২ সালের একটি জাতীয় জরিপে দেখা যায়, আমাদের দেশের প্রতি ৪ জন নারীর একজন এই ভিটামিনের ঘাটতিতে ভুগছেন। শুধু খাবার থেকে ভিটামিন ডি পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় না। রোদে গেলে শরীর ভিটামিন ডি তৈরি করে নেয়। তবে নিয়মিত রোদে না যাওয়া কিংবা কাপড় দিয়ে শরীর ঢেকে রাখার কারণে অনেকেই ভোগেন ভিটামিনটির ঘাটতিতে। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে জানবেন এই ভিটামিনের ঘাটতিতে ভুগছেন কিনা।
  5. গর্ভবতী অবস্থায় অনেক বেশি ক্যাফেইন খাওয়া শিশুর জন্য ক্ষতিকর। এতে শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে। এছাড়া গর্ভপাতের মতো জটিলতাও দেখা দিতে পারে উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন খেলে। গর্ভবতী অবস্থায় ক্যাফেইন গ্রহণ ২০০ মিলির মধ্যে রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। যেহেতু হুট করে ক্যাফেইনের মাত্রা কমিয়ে দেওয়া কষ্টকর, তা সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরপরই চেষ্টা করুন একটু একটু করে পরিমাণ কমিয়ে দিতে। গর্ভবতী অবস্থায় দুই কাপ কফি কিংবা আড়াই কাপের একটু বেশি পরিমাণ চা খেতে পারেন। এর বেশি খাওয়াটা ঝুঁকি তৈরি করবে।
  6. আপনার ওজন যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তবে গর্ভধারণের সময় নানা ধরনের রোগ যেমন ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। আবার সন্তান প্রসবের সময়েও নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে গর্ভবতী অবস্থায় কোনোভাবেই ওজন কমানোর চেষ্টা করা যাবে না। ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলেও সন্তান প্রসবে জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই মায়ের স্বাভাবিক ওজন থাকা খুব জরুরি। সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করার পর তাই এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
  7. আমাদের সবারই সবসময় স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত। তবে সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর বিশেষভাবে নজর দিতে হবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের প্রতি। প্লেটে আগে ভাত না নিয়ে সবজি নিন। চেষ্টা করবেন প্লেটের অর্ধেক শাকসবজি দিয়ে ভর্তি করতে। একভাগ নেবেন আমিষ জাতীয় খাবার। বাকি একভাগ নেবেন লাল চালের ভাত। ফাস্টফুড, অতিরিক্ত লবণ, চিনি, তেলযুক্ত খাবার বাদ দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন।
  8. সন্তান ধারণ ও জন্মদান একটি লম্বা জার্নি। এই ধকলের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করুন ব্যায়ামের মাধ্যমে। এতে গর্ভধারণের পর নানা ধরনের রোগ থেকেও দূরে থাকতে পারবেন। 
  9. নারী-পুরুষ উভয়েরই সন্তান জন্মদান ক্ষমতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে ধূমপানের অভ্যাস। এমনকি আশেপাশের কেউ ধূমপান করলেও নানা ধরনের জটিলতা বড়তে পারে। তাই সন্তান জন্ম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সবাইকে এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
  10. গর্ভধারণের সময় কিছু রোগ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। তাই সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরপরই একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন আপনার স্বাস্থ্য বিষয়ে। যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, খিঁচুনি ইত্যাদি আছে কিনা, থাকলে সেটা নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি এগুলো নিয়ে বিষদ আলোচনা করে নেবেন।