‘স্ত্রীকে আমি সহ্য করতে পারি না’

প্রশ্ন: পারিবারিক পছন্দে বিয়ে করেছিলাম। মেয়ে দেখার সময় পছন্দ হয়নি। কিন্তু পরিবারের জোরাজুরিতে বিয়ে করেছি। ভেবেছি বিয়ের পর ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা আর হয়নি। স্ত্রীকে আমি সহ্য করতে পারি না। অথচ তার কিন্তু সেভাবে দোষ নেই। সে আমার প্রতি যত্নশীল। আমিই পারছি না তার সাথে থাকতে। তাকে কেন ভালোবাসতে পারছি না সেজন্য অপরাধবোধও কাজ করে। কী করবো?

উত্তর: ১) সময় নিন: আপনার এই সমস্যার সমাধান রাতারাতি হবে না। ধৈর্য্য ধরুন এবং প্রক্রিয়াটিতে সময় দিন। আপনি বিয়ের আগে একটা নির্দিষ্ট ধরনের সম্পর্কের কল্পনা করেছিলেন, যা বাস্তবে মিলছে না। তবে সবকিছুই পরিবর্তনশীল। সময়ের সাথে সাথে নিজের অজান্তেই আমাদের ব‍্যক্তিত্ব, পছন্দ-অপছন্দ, মূল্যবোধ, বিশ্বাস এগুলো পরিবর্তিত হয়। প্রকৃতির নিয়মে আমাদের অনেক জটিলতার সমাধান আপনাআপনিই হয়ে যায়।

২) মাইন্ডফুল মেডিটেশন করুন: বর্তমান ক্ষণে জীবন যাপন করুন, অতীতের দুঃখ, বঞ্চনা, পছন্দ-অপছন্দ, অনুভূতি বা ভবিষ্যতের আশঙ্কা বা জল্পনা-কল্পনায় নিজেকে বন্দি করে না রেখে। মেডিটেশন বা ব্রিদিং এক্সারসাইজ আপনার মানসিক শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে এবং আপনার আবেগগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে।

৩) ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন: মনে মনে ১ থেকে ৪ গুনতে গুনতে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। তারপর মনে মনে ১ থেকে ৪ গুনতে গুনতে শ্বাস ধরে রাখুন। সবশেষে মনে মনে ১ থেকে ৬ গুনতে গুনতে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। শ্বাস ছাড়ার সময় আপনার পেট ভেতরের দিকে টেনে নিন যাতে করে ফুসফুসের নিচের অংশে আটকে থাকা বাতাস নাক দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। এই ব্রিদিং এক্সারসাইজ আপনার যখনই মনে হবে তখনই কয়েকবার করুন।

৪) পেশাদার ম্যারেজ কাউন্সেলরের সাহায্য নিন: সব শেষ উপায় হিসেবে একজন পেশাদার ম্যারেজ কাউন্সেলরের সাথে কথা বলুন। তিনি আপনার অভিজ্ঞতা, অনুভূতি এবং আপনার স্ত্রীর সাথে আপনার সম্পর্কের গভীরতা বিশ্লেষণ করতে পারবেন এবং সমাধানের পথ দেখাতে পারবেন।

প্রশ্ন: আমার বয়স ২০ বছর। আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব বেশি আসক্ত। আমি দৈনন্দিন সব কাজ করি সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করবো বলে। নাহলে কাজের আগ্রহ পাই না। দিনের অনেকটুকু সময় নষ্ট হয় ফোনে। এতে পড়াশোনাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কী করব?

উত্তর: ১) ডুমস্ক্রলিং ও নোটিফিকেশন বন্ধ করুন: সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করে একের পর এক র‍্যানডম ফিড দেখার অভ্যাস (Doomscrolling) বন্ধ করুন। আমাদের মস্তিষ্ক হলো একটি তথ্য প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্র যা বিভিন্ন ইন্দ্রিয়র মাধ্যমে আসা সকল ডাটা বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য বিপদ আঁচ করে। সোশ্যাল মিডিয়ার ফিড থেকে আসা তথ্য বিশ্লেষণ করতে করতেই মস্তিষ্কের প্রয়োজনীয় নিউরোট্রান্সমিটার কমে গিয়ে মস্তিষ্কে অবসাদ তৈরি হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন বা মিউট করে রাখুন। এটি আপনাকে বারবার ফোন চেক করার প্রবণতা থেকে বিরত রাখবে।

২) প্রোডাক্টিভ অ্যাপ ব্যবহার করুন: এমন কিছু অ্যাপ ব্যবহার করুন যা আপনার পড়াশোনা, হবি বা অন্য কোনও প্রোডাক্টিভ কাজে গতি সঞ্চার করবে। এ ধরনের কিছু অ্যাপ হচ্ছে: Brilliant, Nibble, Canva, Mentimeter, Garage band ইত্যাদি। তাছাড়া, ইউটিউবে আপনার পছন্দের শিক্ষামূলক ও আগ্রহ-উদ্দীপক বিভিন্ন চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন। বিভিন্ন অনলাইন শিক্ষামূলক ম্যাগাজিন যেমন, New Scientist, Scientific America এসব সাবস্ক্রাইব করুন।

৩) সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার কমানোর অ্যাপ ব্যবহার করুন: সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার কমানোর জন্য বেশ কিছু অ্যাপ রয়েছে যা আপনাকে সাহায্য করতে পারে। এরকম কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যাপ হলো: Forest (আপনি যখন ফোন ব্যবহার করবেন না, তখন একটি ভার্চুয়াল গাছ বড় হতে থাকে। বেশি ফোন ব্যবহার করলে গাছটি মরে যায়), Opal (এই অ্যাপটি আপনার স্ক্রিন টাইম ট্র্যাক করার মাধ্যমে আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সময় সীমিত করতে সাহায্য করে), Dumb Phone (এই অ্যাপটি আপনার হোম স্ক্রিনকে মিনিমালিস্ট করে তোলে এবং অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো সরিয়ে ফেলে), Digital Wellbeing (গুগলের এই টুলটি আপনার স্ক্রিন টাইম এবং অ্যাপ ব্যবহারের সময় ট্র্যাক করে আপনাকে দৈনন্দিন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ভিজ্যুয়াল গ্রাফ দেখায়)।

৪) বন্ধু, পরিবার ও প্রকৃতির সাথে সময় কাটান: পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব, এবং আত্মীয়স্বজনদের সাথে বেশি সময় কাটান। গাছপালা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক পরিবেশে নিয়মিত বেড়াতে যান। প্রতিদিন পনেরো মিনিট থেকে আধাঘণ্টা সময় খালিপায়ে মাঠে, ঘাস বা মাটির উপর হাঁটুন। সম্ভব হলে এ সময় মাইন্ডফুল মেডিটেশন ও ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন।