‘আমি কখনও বাবা হতে পারবো না’

প্রশ্ন: আমার বয়স ২৪ বছর। সম্প্রতি আমি জানতে পেরেছি আমার স্পার্ম কাউন্ট একেবারেই কম এবং আরও কিছু জটিলতা আছে। আমি কখনও বাবা হতে পারবো না। আমার ৫ বছরের সম্পর্ক রয়েছে, আগামী বছরই বিয়ে করার কথা ছিল। আমি খুবই ভেঙে পড়েছি। প্রেমিকার সাথে শেয়ার কীভাবে করবো বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে সব জানার পর যদি আমাকে ছেড়ে চলে যায়? আমি প্রচণ্ড হতাশায় ভুগছি। কেন আমার সাথে এমন হলো?

উত্তর: ১) আশাবাদী হোন : স্পার্ম কাউন্ট কম হলেও সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব। অনেক পুরুষ যাদের স্পার্ম কাউন্ট কম, তারা সফলভাবে সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছেন। আপনার স্পার্ম কাউন্ট বাড়ানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন, যেমন প্রাণিজ আমিষ ও প্রাকৃতিক স্নেহ জাতীয় খাবার খান। শর্করা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন, ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন, পর্যাপ্ত ঘুমান, স্ট্রেস কমান। যদি প্রাকৃতিকভাবে সন্তান ধারণে সমস্যা হয়, তাহলে চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF) বা ইনট্রাসাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন (ICSI) সাহায্য করতে পারে।

২) খোলামেলা ও সৎ থাকুন: আপনার অনুভূতি এবং উদ্বেগের কথা আপনার প্রেমিকার সাথে সৎভাবে শেয়ার করুন। তাকে জানান যে আপনি কতটা কষ্ট পাচ্ছেন এবং তার সমর্থন আপনার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তার প্রতিক্রিয়া শোনার জন্য প্রস্তুত থাকুন এবং তার অনুভূতিগুলোকেও সম্মানের সাথে গ্রহণ করুন।

৩) মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন করুন: প্রতিটি মুহূর্তে সেই মুহূর্তের বাস্তবতা ও পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে সচেতন হওয়াই মাইন্ডফুলনেস। প্রতিদিনের স্বাভাবিক অভ্যাস যেমন ব্রাশ করা, চা খাওয়া, বা হাঁটাচলা করার সময় মাইন্ডফুল থাকুন। প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটান। এ সময় প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করুন এবং চারপাশের গাছ, ফুল, পাখির গান, এবং বাতাসের শব্দ শুনুন।

৪) শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন কিছু সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিন। মনে মনে ১ থেকে ৪ গুনতে গুনতে ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন এবং মনে মনে ১ থেকে ৪ গুনতে গুনতে শ্বাস ধরে রাখুন। এরপর মনে মনে ১ থেকে ৬ গুনতে গুনতে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। শ্বাস ছাড়ার সময় পেট ভিতরের দিকে টেনে রাখুন। যখনই মনে হবে তখনই কয়েকবার ব্যায়ামটি করুন।

প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৪ বছর। ৭ বছরের সংসার। কিন্তু স্বামীর সংগে দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে। আমি চেষ্টা করেছিলাম বসে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলার কিংবা সমাধানের চেষ্টা করার জন্য। কিন্তু আমার স্বামীর একটাই কথা, এমন কিছুই নাকি না। আমি নাকি অহেতুক ভাবছি। কিন্তু দিনের পর দিন ঠিক মতো কথা না বলা, কোথাও ঘুরতে না যাওয়া, বাচ্চার সাথে কোয়ালিটি টাইম না কাটানো কি স্বাভাবিক? আজকাল কোনো কিছুই ভালো লাগছে না আমার। খুব হতাশ হয়ে পড়ছি।

উত্তর: ১) খোলামেলা কথা বলুন: আপনার স্বামীর সাথে সরাসরি এবং খোলামেলা কথা বলুন। আপনার নিজের অনুভূতিগুলো শেয়ার করুন এবং তাকে তার অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে উৎসাহিত করুন। হয়তো তিনি কোনও চাপের মধ্যে আছেন। অভিযোগ না করে, আপনি কী চান তা স্পষ্টভাবে বলুন। যেমন, ‘আমি চাই আমরা একসাথে আরও সময় কাটাই’। আপনার অনুভূতিগুলো বোঝাতে নির্দিষ্ট উদাহরণ ব্যবহার করুন। যেমন, ‘যখন তুমি ফোনে ব্যস্ত থাকো এবং আমার সাথে কথা বলো না, তখন আমি একা বোধ করি।’ আপনার স্বামীর ইতিবাচক দিকগুলো এবং তার ভালো কাজগুলো প্রশংসা করুন।

২) নিজের যত্ন নিন: নিজের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। নিজের জন্য কিছু সময় বের করুন এবং এমন কিছু করুন যা আপনাকে সুখী করে। নিয়মিত ব্যায়াম করুন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং পর্যাপ্ত ঘুমান। ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন। প্রতিদিন পনেরো মিনিট থেকে আধঘণ্টা সময় খালিপায়ে মাটিতে বা ঘাসের উপর হাঁটুন বা দাঁড়িয়ে থাকুন।

৩) ধৈর্য ধরুন: পরিবর্তন সময় সাপেক্ষ হতে পারে। ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যান এবং একে অপরকে সমর্থন করুন। একবারে সবকিছু সমাধান করার চেষ্টা করবেন না। ধীরে ধীরে এবং ধৈর্য ধরে সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করুন।

৪) বিশেষজ্ঞ পরামর্শ গ্রহণ করুন: যদি সমস্যা সমাধান না হয়, তাহলে কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে পারেন। তারা আপনাদের সম্পর্কের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে এবং সমাধান করতে সাহায্য করতে পারবেন। আপনার স্বামী শারীরিক বা পারিপার্শি কোনও সমস্যার কারণে (সেকেন্ডারি ডিপ্রেশন) বা কোনও কারণ ছাড়াই (প্রাইমারি ডিপ্রেশন) বিষণ্ণতায় ভুগতে পারেন। সেরকম সম্ভাবনা থাকলে আপনাদের উচিত একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের শরনাপন্ন হওয়া।