‘আমার মা পরনিন্দা করতে পছন্দ করে’

প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৫ বছর। আমার মা পরনিন্দা করতে পছন্দ করে। আমি ছোটবেলা থেকেই এটা দেখে বড় হয়েছি। আমরা বাবা মায়ের কাছ থেকে সবসময় নীতি নৈতিকতা শিখি। কিন্তু আমি শিখেছি কীভাবে অন্যকে ছোট করতে হয়, অন্যের দুর্নাম করতে হয়। যখন বুঝতে শিখেছি মা ভুল করছে, অনেকবার শুধরাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। এতে মায়ের উপর থেকে আমার শ্রদ্ধাবোধ একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। আমি চাই মাকে ক্ষমা করে দিতে, কিন্তু পারি না। আমার কী করা উচিত? আমার মায়ের সাথে সম্পর্ক একেবারেই ভালো না। বাধ্য না হলে কথা বলি না। সবার মায়ের সাথে সুন্দর সম্পর্ক দেখে খুব কষ্ট হয়।

উত্তর: ১) ধৈর্য্য ধরুন: আপনার মায়ের আচরণ পরিবর্তন হবে কিনা তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। মানুষের আচরণ সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতেও পারে। সেটি দেখার জন্য আপনাকে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। জোর করে কারোর আচরণের পরিবর্তন আনা সম্ভব না।

২) পজিটিভ রিইনফোর্সমেন্ট: যখন মায়ের আচরণ ভালো হয়, তখন তার প্রশংসা করুন। এটি উনাকে ভালো আচরণ করতে উৎসাহিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি মা কোনও কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেন বা পরিবারের সদস্যদের সাথে সদাচরণ করেন, তখন তাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান বা তার প্রশংসা করুন। আপনি বলতে পারেন, মা, আপনি আজ খুব ভালো কাজ করেছেন, বা আপনার এই আচরণ আমাদের সবাইকে খুশি করেছে। এই ধরনের প্রশংসা মায়ের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করবে এবং তিনি আরও ভালো আচরণ করতে উৎসাহিত হবেন। এছাড়া, মাঝে মাঝে ছোট উপহার বা বিশেষ কিছু দিয়ে তাকে পুরস্কৃত করাও যেতে পারে, যা তার ভালো আচরণের প্রতি আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে।

৩) ক্ষমা করার চেষ্টা করুন: ক্ষমা করা মানে তার আচরণকে সমর্থন করা নয়, বরং নিজের মানসিক শান্তির জন্য তাকে ক্ষমা করা। আপনার মা নিজের ভালোমন্দ সকল বৈশিষ্ট্য সহজভাবে গ্রহণ করতে পারছেন না বলেই উনি অপরের দোষ-ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করতে ব্যস্ত থাকেন। উনাকে বোঝার চেষ্টা করুন কেন উনি নিজেকে পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করতে পারছেন না বা ভালোবাসতে পারছেন না। সেজন্য উনাকে ভালোবাসা ও সহানুভূতির সাথে দেখতে হবে। আপনি যদি আপনার মাকে তার সকল দোষ-ত্রুটিসহ মেনে নিতে না পারেন, তাহলে আপনার সাথে আপনার মায়ের কোনও পার্থক্য থাকবে না। এজন্য আপনাকে আগে নিজের সাথে বোঝাপড়া করতে হবে যে, আপনি নিজেকে সকল দোষ-ত্রুটিসহ মেনে নিতে পারছেন কিনা।

৪) নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন: মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত মেডিটেশন, শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের মাধ্যমে নিজের মানসিক শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করুন। ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন। প্রকৃতির মাঝে সময় কাটান। প্রতিদিন কিছুটা সময় খালিপায়ে মাটিতে বা ঘাসের উপর হাঁটুন বা দাঁড়িয়ে থাকুন। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। শর্করা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন এবং প্রানিজ আমিষ ও স্নেহ জাতীয় খাবার অধিক পরিমাণে গ্রহণ করুন।

প্রশ্ন: আমার বয়স ৩১ বছর। প্রেম করে বিয়ে করেছি তিন বছর আগে। কোনও কারণ ছাড়াই এখন আমার আর সংসার করতে ইচ্ছে করে না। স্ত্রী চাইছে সন্তান নিতে। কিন্তু আমি সংসারের উপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। কী করবো?

উত্তর: ১) নিজের যত্ন নিন: নিজের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। ভিটামিন ডি-এর অভাবে অথবা রক্তশূন্যতার কারণে আপনার মধ্যে সংসার করার ব্যাপারে অনীহা তৈরি হতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। প্রতিদিন কিছু সময় শরীরে রোদ লাগানোর চেষ্টা করুন। সকল ধরনের শর্করা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। মাংস, ডিম, ঘি মাখন, সরিষার তেল এগুলো বেশি করে খান। সয়াবিন তেল পরিহার করুন। নিজের জন্য কিছু সময় বের করুন এবং এমন কিছু করুন যা আপনাকে সুখী করে।

২) শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন: শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে এবং মনকে শান্ত করতে অত্যন্ত কার্যকর। প্রথমে মনে মনে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে গুনতে নাক দিয়ে লম্বা শ্বাস নিন। এরপর মনে মনে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে গুনতে শ্বাস ধরে রাখুন। সবশেষে, মনে মনে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে গুনতে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। শ্বাস ছাড়ার সময় পেটের মাংসপেশী ভেতরের দিকে টেনে রাখুন, যাতে করে ফুসফুসের গভীর তলদেশ থেকে বাতাস শ্বাসের সাথে বের হতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করুন।

৩) গ্রাউন্ডিং বা আর্থিং করুন: প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট খালি পায়ে ঘাস বা মাটির উপর হাঁটুন বা দাঁড়ান। এটি আপনার শরীরের সাথে পৃথিবীর প্রাকৃতিক শক্তির সংযোগ স্থাপন করবে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়াও বড় কোনও গাছের কাণ্ড জড়িয়ে ধরে কিছু সময় কাটান। প্রাকৃতিক জলাশয়ে সাঁতার কাটাও একটি চমৎকার উপায়। প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানোর মাধ্যমে আপনি নিজেকে আরও পুনরুজ্জীবিত ও সতেজ অনুভব করবেন।

৪) বিশেষজ্ঞ পরামর্শ গ্রহণ করুন: যদি সমস্যা সমাধান না হয়, তাহলে কোনও সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে পারেন। তারা হয়তো আপনাদের সম্পর্কের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে এবং সমাধান করতে সাহায্য করতে পারবেন। আপনার শারীরিক বা পারিপার্শি কোনও সমস্যার কারণে যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপোথাইরয়েডিজমের কারণে (সেকেন্ডারি ডিপ্রেশন) বা কোনও কারণ ছাড়াই (প্রাইমারি ডিপ্রেশন) বিষণ্ণতায় ভুগতে পারেন। সে রকম সম্ভাবনা থাকলে আপনাদের উচিত একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া।