হিট স্ট্রোক সম্পর্কে যা কিছু জানা জরুরি

হিট স্ট্রোক হচ্ছে সবচেয়ে গুরুতর তাপজনিত অসুস্থতা। তীব্র গরমে দীর্ঘ সময় অবস্থান করলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যায় এবং শরীর নিজ থেকে এই অতিরিক্ত তাপ বের করতে পারে না। শরীরের এই তাপজনিত গুরুতর অসুস্থতাই হলো হিট স্ট্রোক বা সান স্ট্রোক। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে এই ধরনের স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। তাই গরমের এই সময়টায় সচেতন থাকার বিকল্প নেই। 

ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার ডা. ফজলে রাব্বী খান জানান, তীব্র গরমে রোদে দীর্ঘ সময় অবস্থান করা ছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না পান করার কারণে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না পান করলে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে লবণ ও তরল বেরিয়ে যাওয়ায় পানিশূন্যতা দেখা দেয়। যার ফলে শরীর হয়ে যায় অবসন্ন ও পরিশ্রান্ত। তাছাড়া কিছু ওষুধ, যেমন; মূত্রবর্ধক, বিটা-ব্লকার্স কিংবা অ্যান্টি-কলিনার্জিক্স, অতিরিক্ত মদ্যপান বা মাদক সেবনও শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এই ঝুঁকি শিশু, বয়স্ক মানুষ (৬৫ বছরের অধিক বয়স), স্থূল ব্যক্তি, গর্ভবতী মহিলা এবং হৃদরোগ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্তের বেশি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

হিট স্ট্রোকের তীব্র তাপমাত্রা মস্তিষ্কের কোষ এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, এবং এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। হিট স্ট্রোক হৃৎপিণ্ডের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। হিট স্ট্রোক কিডনি ও যকৃতের রক্ত নালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং এইসব অঙ্গগুলো বিকল করে দিতে পারে। তাছাড়া হিট স্ট্রোক রোগীর সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। মনে রাখতে হবে, হিট স্ট্রোক একটি জরুরি অবস্থা যার দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। না হলে হিট স্ট্রোক মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

হিট স্ট্রোকের লক্ষণ 

  • মাথা ব্যথা
  • চোখে ঝাপসা দেখা
  • মাংসপেশির ব্যথা ও দুর্বলতা
  • শ্বাস- প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া
  • ত্বক লালচে হয়ে ওঠা
  • গরম লাগলেও ঘাম কম হওয়া
  • বমি হওয়া
  • হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
  • হাঁটতে কষ্ট হওয়া

 

হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে কী করবেন?

  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ঠান্ডা, ছায়াযুক্ত জায়গায় নিয়ে যান। পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন, বা বরফের পানিতে ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিন। মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালুন এবং উক্ত স্থানে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন। 
  • পানিশূন্যতা রোধে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ORS (Oral Rehydration Solution) বা ঠান্ডা পানি বা লবণ ও চিনি মিশ্রিত (electrolyte solution) পানি পান করান।
  • অবস্থা দ্রুত উন্নতি না হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। রোগীকে নিকটস্ত জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে হবে, বা অ্যাম্বুলেন্স কল করতে হবে। 

হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে কী করবেন?

১। বারডেম জেনারেল হাসপাতাল চিকিৎসক ডা.কামরুজ্জামান নাবিল জানান, গরমে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। সেজন্য বাইরে বের হলে পানি নিয়ে বের হওয়া জরুরি। শরীরে পানির ঘাটতি কমাতে নিয়মিত পানি খাওয়ার বিকল্প নেই।। পাশাপাশি পানিজাতীয় খাবারও খেতে হবে। পানি বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় এমন ফল তরমুজ খেতে পারেন নিয়মিত। প্রচণ্ড গরমে চলার পথে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খাওয়া অনুচিত। কারণ অনেক সময় হঠাৎ ঠান্ডা পানি খেলে গলা ব্যথাসহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। বাইরে থেকে ঘেমে ঘরে ফিরেও সঙ্গে সঙ্গে হিমশীতল পানি খাওয়া ঠিক নয়। বাচ্চা, বয়স্ক এবং ক্রনিক রোগের রোগীদের এই গরমে বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা খুব জরুরি। 

২। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিনযুক্ত খাবার খুব বেশি খাবেন না। তাজা ফল, শাকসবজি রাখুন খাদ্য তালিকায়।

৩।অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খাবেন না। মরিচ, আদা, দারুচিনিসহ বেশ কিছু মসলা শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

৪। কাঁচা আম পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। এই গরমে আপনার জন্য আদর্শ পানীয় হতে পারে কাঁচা আমের শরবত। প্রচুর ঘামের কারণে শরীর থেকে নির্গত সোডিয়াম ক্লোরাইড ও আয়রন ঘাটতি দূর করবে এটি।

৫। হালকা রঙের ঢিলেঢালা সুতি পোশাক পরুন।