হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রদাহের জন্য ভিটামিন ডি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সূর্যালোকের সংস্পর্শে এলে শরীরে ভিটামিন ডি সংশ্লেষিত হয়। কিছু খাবার থেকেও মেলে এই ভিটামিন। তবে বিশ্বজুড়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভোগেন। এই ঘাটতি মূলত শরীরে রোদ না লাগানোর কারণে হয়। খারাপ খাদ্যাভ্যাসও দায়ী এজন্য। বেশ কয়েকটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে সম্পর্কিত এই ভিটামিনের ঘাটতি। জেনে নিন ভিটামিন ডি এর অভাবে কোন কোন রোগ হতে পারে।
১। অস্টিওপোরোসিস এবং হাড় ভাঙা
ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে, যা শক্তিশালী হাড়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই ভিটামিন ডি-এর অভাব হাড়কে দুর্বল করে দিতে পারে, যার ফলে অস্টিওপোরোসিস হয়। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে হাড় ভাঙার ঝুঁকি বেড়ে যায়। 'হাড় ও অস্টিওপোরোসিসের উপর ভিটামিন ডি-এর প্রভাব' শীর্ষক ২০১১ সালের একটি পর্যালোচনায় বলা হয়েছে যে ভিটামিন ডি অন্ত্র থেকে ক্যালসিয়াম শোষণকে উদ্দীপিত করে। ভিটামিন ডি-এর অভাবের পরিণতি হলো সেকেন্ডারি হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিজম এবং হাড়ের ক্ষয়, যার ফলে অস্টিওপোরোসিস এবং ফ্র্যাকচার, খনিজকরণের ত্রুটি হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে অস্টিওম্যালাসিয়া হতে পারে এবং পেশী দুর্বলতার কারণ হতে পারে ভিটামিন ডি এর অভার।
২। টাইপ ২ ডায়াবেটিস
ইনসুলিন সংবেদনশীলতা নিয়ন্ত্রণে ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর তাই ভিটামিন ডি-এর অভাব গ্লুকোজ বিপাককে ব্যাহত করতে পারে, ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। 'ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টেশন, গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণ এবং প্রিডায়াবেটিক্সে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স' শীর্ষক ২০১৮ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টেশন প্রিডায়াবেটিক্সে বা ডায়াবেটিস হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণ উন্নত করে এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমায়।
৩। বিষণ্ণতা এবং মুড ডিসঅর্ডার
ভিটামিন ডি আমাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে, যা আমাদের মনের উপর প্রভাব ফেলে। বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায়শই ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম দেখা যায়। ২০১৩ সালে দ্য ব্রিটিশ জার্নাল অব সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত একটি মেটা-বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে ভিটামিন ডি-এর অভাবযুক্ত ব্যক্তিদের বিষণ্ণতায় ভোগার ঝুঁকি বেশি।
৪। অটোইমিউন রোগ
ভিটামিন ডি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে ভিটামিন ডি-এর অভাব মানুষের মধ্যে অটোইমিউন রোগ যেমন মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (এমএস) এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (আরএ)-এর সূত্রপাত ঘটাতে পারে। 'ভিটামিন ডি এবং অটোইমিউন রিউমাটিক ডিজিজেস' শীর্ষক ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ভিটামিন ডি-এর ইমিউনোমোডুলেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এর ঘাটতি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (আরএ) এবং সিস্টেমিক লুপাস এরিথেমাটোসাস (এসএলই) এর মতো অটোইমিউন রোগের বিকাশের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।
৫। কিছু ক্যানসার
ভিটামিন ডি-এর অভাব কিছু ক্যানসারের কারণও হতে পারে- যেমন কোলোরেক্টাল, স্তন, প্রোস্টেট ক্যানসার। গবেষণায় দেখা গেছে যে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি মাত্রা নির্দিষ্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে। ২০১৫ সালে 'কোলোরেক্টাল ক্যানসার প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য ভিটামিন ডি: প্রমাণ কী?' শীর্ষক একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, ক্যানসার প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য ভিটামিন ডি-এর ভূমিকা রয়েছে।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া