কোষ্ঠকাঠিন্যমুক্ত ঈদ কাটাতে যা করবেন

কোরবানির ঈদে একটু বেশিই মাংস খাওয়া হয় সবার। তাই অনেকেই ভোগেন সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায়। এ নিয়ে রইলো বিস্তারিত আলোচনা।

 

কোষ্ঠকাঠিন্য দুই ধরনের

১। অ্যাকিউট কনস্টিপেশন বা সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য

২। ক্রনিক কনস্টিপেশন বা দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য

 

সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য

যদি অল্প কয়েকদিনের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্যের উপসর্গ দেখা দেয়, অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় যদি তিন মাসের কম হয়, তবে তা সাময়িক। যেমন তিনবেলা মাংস, মাছ, ডিম খাচ্ছেন। কিন্তু নিয়মিত মলত্যাগ হচ্ছে না। হলেও তা বেশ শক্ত। এ সমস্যার মেয়াদ তিন মাসের কম হলে তা সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য। আবার সারা বছর সুস্থ, শুধু কোরবানির ঈদের কয়েকদিন পর দেখা গেলো পেট ফুলে যাচ্ছে, পেটে ব্যথা হচ্ছে ও মলত্যাগ ঠিকঠাক হচ্ছে না- তবে এই অবস্থাকে অ্যাকিউট কনস্টিপেশন বা সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য বলা যায়।

 

সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্যের উপসর্গ

  • মলত্যাগের সাধারণ রুটিন বদলে যাবে।
  • শক্ত মলত্যাগ হবে।
  • মলত্যাগের সময় মলাশয়ে ব্যথা হবে।
  • মলত্যাগ অল্প অল্প হতে পারে।
  • পেট ফুলে যেতে পারে।
  • পেটে ব্যথা হতে পারে।
  • কিছুক্ষন পরপর বায়ু ত্যাগ হতে পারে।
  • খাওয়ার রুচি কমে যাবে।
  • দুশ্চিন্তা ও অবসাদগ্রস্ত মনে হতে পারে।

 

জটিলতা

  • পায়ুপথের আশেপাশের রক্তনালীগুলোতে প্রদাহ হতে পারে এবং মলত্যাগ করার সময় পায়ুপথে রক্ত যেতে পারে। এমনকি পায়ুপথে চুলকানিও দেখা দিতে পারে।
  • এনাল ফিস্টুলা দেখা দিতে পারে।
  • ইউরিনারি ইনকনসিস্টেন্স বা প্রস্রাবে অনিয়ম দেখা দিতে পারে।

 

কোষ্ঠকাঠিন্য যেসব কারণে হয়

  • সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য মূলত অস্বাভাবিক লাইফস্টাইলের কারণেই হয়। যেমন-
  • আঁশযুক্ত খাবার বা শাক-সবজি কম খাওয়া।
  • নিয়মিত মলত্যাগ না করা, বেগ আটকে রেখে কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া।
  • নিয়মিত খাবার না খাওয়া।
  • পরিমিত মাত্রায় না ঘুমানো, চিন্তিত বা অবসাদগ্রস্ত থাকা।
  • আইবিএস এর সমস্যা থাকা।
  • অত্যাধিক পরিমাণ প্রোটিন খাওয়া।
  • আবার কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও এটি হতে পারে। যেমন- ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার, অ্যান্টি স্পাজমোডিক, অ্যান্টি ডায়েরিয়াল ড্রাগস, আয়রন ট্যাবলেট, অ্যালুমিনিয়াম যুক্ত অ্যান্টাসিড ইত্যাদি।

 

দিনে কতটুকু প্রোটিন?

  • ইনস্টিটিউট অব মেডিসিন ইউএসএ-এর তথ্য অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে প্রোটিন দরকার ১ গ্রাম/কেজি বডি ওয়েট। অর্থাৎ একজন মানুষের ওজন যদি ৬০ কেজি হয়, আর তিনি যদি ভারী কোনও কাজ না করেন, তা হলে দিনে প্রোটিন দরকার ৬০ গ্রাম। ভারী কাজ বা শরীরচর্চা করলে আরও ৩০ গ্রাম বাড়নো যায়।
  • তবে একজন সুস্থ মানুষ কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া দিনে সর্বোচ্চ ২ গ্রাম/কেজি প্রোটিন গ্রহণ করতে পারবেন। সেই হিসাবে ৬০ কেজি ওজনের কেউ দিনে সর্বোচ্চ ১২০ গ্রাম প্রোটিন খেতে পারবেন। এর বেশি খেলেই হজমে গোলযোগ বা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
  • আমেরিকার ইন্সটিটিউট অব মেডিসিনের তথ্য অনুযায়ী, ২৬ গ্রাম প্রোটিন পেতে ১০০ গ্রাম রান্না করা মাংসের প্রয়োজন। অর্থাৎ প্রতি ১ গ্রাম প্রোটিনের জন্য ৪ গ্রাম মাংস দরকার। সুতরাং কেউ যদি মাংস থেকেই সমস্ত প্রোটিন নিতে চায় তবে দিনে ২৪০ গ্রাম মাংসই যথেষ্ট।
  • সেই হিসেবে তার দিনে মাংস গ্রহণের সীমা হলো সর্বোচ্চ ৪৮০ গ্রাম। যা তিন বেলায় ভাগ করে গ্রহণ করতে হবে। এরচেয়ে বেশি হলেই ম্যাল-অ্যাবসরবশন সিনড্রোম তথা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেবে। হজমশক্তি বিবেচনায় অনেকের আবার ২০০ গ্রামের বেশি মাংস খেলেই দেখা দেবে এ সমস্যা।

 

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে যা করবেন

লাইফস্টাইল পরিবর্তন করার মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা যায়। যেমন-

  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত শাকসবজি খেতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
  • ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে।
  • অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।
  • অত্যাধিক মাংস খাওয়া যাবে না। দিনে ১০০-১৫০ গ্রামের বেশি না খাওয়াই উত্তম।
  • নিয়মিত ইসবগুলের শরবত খেতে হবে।
  • সম্ভব হলে প্রতিদিন একটি আপেল খেতে হবে। আপেলে পর্যাপ্ত ফাইবার রয়েছে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
  • যেদিন বেশি মাংস খাওয়া হবে, সেদিন সঙ্গে শাক-সবজি, গাজর, শসা এসবও মেনুতে রাখবেন।
  • সকাল, দুপুর ও রাতে এক গ্লাস পানিতে দুই টেবিল চামচ ইসবগুলের ভূষির শরবত খেতে পারেন। এতে কোলনের মধ্যে কিছু পরিমাণ পানি রিটেনশন হবে এবং মল তরল থাকবে। যারা নিয়মিত ইসবগুলের শরবত খায়, তাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা ৯০ শতাংশ কমে যায়।

 

লেখক: চিকিৎসক, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ। সিইও,সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্স এন্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ