পরীমনিকে যেভাবে প্রীতিলতা বানালেন বিপ্লব সাহা

অগ্নিকন‍্যা প্রীতিলতাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন চলচ্চিত্র। ১৯৮০ সালে কলকাতার নির্মল চৌধুরী প্রথম বানালেন ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’। ওতে প্রীতিলতা হয়েছিলেন বনানী চৌধুরী। ২০১০ সালে বলিউডের ‘খেলে হাম জি জাঁ সে’ চলচ্চিত্রে প্রীতিলতা রূপে দেখা যায় বিশাখা সিংকে। বাংলাদেশে এ প্রথম এ বিপ্লবীকে নিয়ে তৈরি হচ্ছে চলচ্চিত্র ‘প্রীতিলতা’। গোলাম রাব্বানীর চিত্রনাট্যে সিনেমাটির পরিচালনা করছেন তরুণ নির্মাতা রাশিদ পলাশ। আর এ ছবিতে গ্ল্যামারগার্ল পরীমনিকে প্রীতিলতা রূপে ফুটিয়ে তুলে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন বিশ্বরঙ-এর প্রতিষ্ঠাতা জনপ্রিয় ফ‍্যাশন ডিজাইনার ও কোরিওগ্রাফার বিপ্লব সাহা।

গত ১৯ জুলাই প্রীতিলতার লুক সেট ও লুক টেস্টের আয়োজন করেছিল সিনেমাটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইউফরসি। ক‍্যারেকটার প্রেজেন্টেশন, আর্ট ডিরেকশন, স্টাইলিং ও কোরিওগ্রাফিতে ছিলেন বিপ্লব সাহা। ক‍্যানভাস স্টুডিওতে ফটোশুট করেন ফটোগ্রাফার অনিক চন্দ।

প্রীতিলতা ছবির পোস্টার

পরীমনি বলেন, ‘দাদার (বিপ্লব সাহা) হাতে জাদু আছে। নিজেকে দেখে নিজেই চিনতে পারছিলাম না। শুটের আগে কিছুটা টেনশনে ছিলাম। এখন মনে হচ্ছে আমি এক বিপ্লবীকে নিজের মধ্যে ধারণ করে ঘুরে বেড়াচ্ছি।’

দেশনন্দিত ফ‍্যানশ ডিজাইনার ও কোরিওগ্রাফার বিপ্লব সাহার মুখেই শোনা যাক পরীমনিকে প্রীতিলতা বানানোর গল্পটা-

‘যতটুকু মনে পড়ে ২০১৫ সালের কথা। সাংবাদিক রঞ্জু হঠাৎ ফোন করে প্রীতিলতা ছায়াছবিতে কস্টিউম নিয়ে কাজ করার কথা বললো আমাকে। তখন ব্যক্তিগত কিছু ঝামেলা ও ব্যস্ততার কারণে অপারগতা জানাই। এ পাঁচ বছরে এ নিয়ে আর কিছুই জানতাম না। হঠাৎ আবার রঞ্জু ফোন করে প্রীতিলতা মুভির পোস্টার করার কথা বলে। দুই বছরে করোনার কারণে কোনও কাজ ভালোমতো করা হয়ে ওঠেনি। সৃষ্টিশীল যেকোনও কাজে মানসিক প্রশান্তিটা জরুরি। কিন্তু প্রীতিলতা টিম নাছোড়বান্দা। কাজটা করতেই হবে। প্রীতিলতা এত সিরিয়াস একটা বিষয় যে, কোনোভাবেই নতুন কাজের চাপ নিতে চাচ্ছিলাম না। একদিকে প্রীতিলতা, অন্যদিকে পরীমনি। দুজনের কাউকেই সামনাসামনি দেখিনি। এদিকে ঈদের শেষ কয়টা দিন বিশ্বরঙে অনেক ব্যস্ততা থাকে। গল্পটাও আবার প্রায় এক শ’ বছর আগের। সাজ পোশাক ও এক্সপ্রেশন নিয়ে ভাবার আছে অনেক কিছু।

শেষপর্যন্ত  ফটোশুটের তারিখ ঠিক হলো। রেফারেন্স ছবি দিয়ে প্রীতিলতা টিম বললো- ছবির মতো হুবহু চাই। মাত্র দু’দিনে প্রায় শত বছর আগের শাড়ি-ব্লাউজ, গয়না কোথা থেকে জোগাড় করবো! অনেক কষ্টে সব সংগ্রহ করা হলো।’

বিপ্লব সাহা আরও বললেন, ‘আমি এমনিতে দেশীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। শেষ ২৫ বছরে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির ক্যারেকটার প্রেজেন্টেশনের অনেক কাজ করেছি। এ জন্য এ কাজটা কিছুটা সহজ হয়েছে। কিন্তু প্রীতিলতার মতো সাহসী শক্তিমান বলিষ্ঠ মুখমণ্ডলকে বর্তমান চলচ্চিত্রের গ্ল্যামার-মুখ পরীমনির মধ্যে থেকে বের করে আনতে হবে। এ যেন আরেক অগ্নিপরীক্ষা। এমনিতে নতুন প্রজন্মের কাউকে নিয়ে কাজ করতে কেন যেন খুব একটা আরাম বোধ করি না। কিন্তু মিরপুর পারসোনাতে পৌঁছার পর পর্যন্ত নতুন এক পরীমনিকে আবিষ্কার করেছি। একজন পরিচালক হয়তো এমনই শিল্পী খোঁজেন সবসময়। সকল শঙ্কা দূর হয়ে গেল।’

পরীমনিকে প্রীতিলতা বানানোর কৌশলের খুঁটিনাটি নিয়েও ধারণা দিয়েছেন বিপ্লব সাহা-

‘এ কাজে প্রথমেই চোখের ভ্রূ নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। এরপর চোখজোড়াকে আরও ডার্ক করতে হয়েছে। চোখকে যেন আরেকটু বড় দেখায় সে কাজটাও করতে হয়েছে। প্রীতিলতার সঙ্গে মিল রেখে পরীমনির নিচের ঠোঁটটাকেও আরও ভারী করতে হয়েছে। আবার পরীমনির নাক একটু শার্প, সেটা নিয়েও কাজ করতে হয়েছে। মুখে ফোলা ফোলা ভাবটা আনতে হয়েছে।

চোখজোড়া করতে হয়েছে আরও ডার্ক

পারসোনা পরিবারের সহযোগিতা ছাড়া একার পক্ষে কাজটি করা সম্ভব ছিল না। প্রীতিলতা টিমের প্রত্যেকের আন্তরিকতাও সুন্দর একটা স্মৃতি রয়ে গেল এই পোস্টারের সঙ্গে।’