সত্তরে হেলাল হাফিজ

helalদ্রোহের অনল জ্বালিয়ে উনসত্তুরের গণ আন্দোলনে যার উল্কা-উত্থান, সেই কবি, কবি হেলাল হাফিজের ৬৯ তম জন্মবার্ষিকী আজ। ৭০ এ পা পড়লো এই কবির। বয়সের হিসেব নিয়ে আলাদা কোনও আবেগ নেই তার। জীবনের এ পর্যায়ে এসে তিনি মনে করছেন, ৫০-৬০ বছর বাঁচলেই হয়তো যথেষ্ট ছিল। কিন্তু কষ্টের ভারে ক্লান্ত জীবনে বেঁচে থাকার দিনগুলিকে তবুও তিনি নষ্ট করতে একেবারেই নারাজ। এ কারণেই হাতে ব্রেসলেট, গলায় চেন, রঙ্গিন টি-শার্টের ওপর কারুকাজময় নন্দন-মালা পরিধান করে আনন্দময় জীবন যাপনের চেষ্টা করেন তিনি।

বাংলা সাহিত্যের একক কাব্যগ্রন্থ হিসেবে সর্বাধিক মুদ্রিত গ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জলে’-খ্যাত এ কবি স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকা অবস্থাতেই খ্যাতির শীর্ষে আরোহন করেন। তার বিখ্যাত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতার দুটি চরণ আজও বিদ্রোহের প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে স্ফুলিঙ্গ হয়ে জ্বলে ওঠে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থাতেই জহুরুল হক হলে বসে নিভৃতচারী এ কবির লেখা চরণ দুটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে লেগে আছে। ৬৯-এর গণ অভ্যুস্থানের প্রতিটি মিছিলে উচ্চারিত হতে থাকে দ্রোহের সেই অনল-বাণী। দেয়ালে দেয়ালে লেখা কবিতার অক্ষরগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে, কাব্য থেকে শ্লোগানে রূপ নেয়:

‘‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাওয়ার তার শ্রেষ্ট সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার তার শ্রেষ্ট সময়’’

জাতীয় জীবনে মুক্তি ও দ্রোহের আগুন ছড়ালেও ব্যক্তিজীবনে প্রচণ্ড অভিমানী এ মানুষটি জন্মাবধি নিজের সঙ্গেই কষ্ট ফেরি করে চলেছেন। আমৃত্যু একাকীত্বকে ব্রত করেই জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন।

জীবনে কখনও পুরস্কারের পেছনে না ছুটলেও জীবন সায়াহ্নে এসে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।