সশস্ত্র শান্তির দেশ

গতকাল রাতে খুব বৃষ্টি হয়ে গেছে। আষাঢ়ের প্রথম মেঘেই যারপরনাই রাবীন্দ্রিক বৃষ্টিপাত...সারারাত প্রসব যন্ত্রণায় কাতরে মরেছে। বেলা অবধি ঘুমোতে না পারার আক্ষেপ এখনও চোখেমুখে। তবু সাতসকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে খানিকটা পথ এসেছি, এমন সময় হঠাৎ নিজেকে খুব সুন্দর বলে মনে হলো, সুদর্শন পুরুষ যেমন হয় আরকি। সকালবেলার ফুলের মতো বিশুদ্ধ নয়, কিন্তু জৈবিক সত্যের মতো সুন্দর। তাই সকল গাছেরা তাকিয়ে আছে, গাছেদের আলো আমার গায়ে মেখে মেখে যাচ্ছে, ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে আমাকে ঘিরে। পরনের আড়ম্বর তেমন কিছু নয়, গায়ে একটা হালকা ডেনিম-ব্লু শার্ট, একটু পরেই খুব রোদ উঠে যাবে তাই ফুলস্লিভ, তার ওপর সাদা সাদা স্ট্রাইপ দেওয়া, সঙ্গে একটা ব্ল্যাক জিন্স; চোখে ব্রাউন কালারের সেমি-স্কয়ার শেপেড সানগ্লাস, ব্যাস্! এতেই বেশ সুন্দর লাগছে আমাকে। তবে এর আরেকটা কারণ‌ও থাকতে পারে, তা হলো, সকালের ঘুম স্যাক্রিফাইস করে কাজে বা অকাজে বাড়ি থেকে বেরোনো। এতে একটা অহং আসে মনে, মনে হয়, আমিও তো ভালোবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম। যাকগে, রাস্তায় এখন লোকজন অল্প, ছায়া ছায়া বনবীথির মধ্য দিয়ে গড়পড়তা গতিতে চলেছি, ভালো লাগছে। কিন্তু হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে যে এসব মনে-হ‌ওয়াগুলো টুক করে লিখে নেব নোটপ্যাডে, সে উপায় নেই। এরপর কখন সময় পাব আর কখন লিখব, যখন লিখব তখন অনেক কিছু মনে‌ও থাকবে না। সত্যিই এখন এই মিনিট দশেকের ব্যবধানেই সিংহভাগ ভুলে গেছি। কিন্তু নিজেকে যে অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল তখন, সেকথা ভুলতে পারছি না। গায়ে লোম নেই, ছাল চামড়া দ্যাখা যায়, ঠিকঠাক খেতেও পাই না, কিন্তু সকালের এই ফুরফুরে হাওয়ায় নিজেকে গোল্ডেন রিট্রিভার মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে আমার সোনালি লোমগুলো ঝিরঝির করে উড়ছে, কালো কালো চোখগুলো সব প্রাপ্তির আনন্দে গদগদ হয়ে আছে। তেমন মাংসখেকো ভাব আর আমার মধ্যে নেই। একটা নির্লিপ্ত উন্মাদনায় আমি ছুটে চলেছি। একমাত্র আশ্চর্য হচ্ছি উত্তাপে, অতিলঘু সামর্থ্য নিয়ে সে কেমন প্রসারিত সমস্ত আকাশে। অথচ গতকাল রাতেই সুস্থির জীবনের মতো বিশাখা নক্ষত্রের পতন হয়ে গেছে, রূপ বদলে গেছে স্বকীয় চিন্তার খড়ে। আজকের এই বর্ষাস্নাত মাটিতে কিছু অর্বুদ হয়ত এখনও নিজেদের মিড় ও গমক ধুয়ে ধুয়ে নিচ্ছে, গুলে যাচ্ছে নিজেদের স্বপ্ন শিকারে। হয়ত রাতচরা পাখির সমগ্র ফিসফিস ভেঙে-পড়া সঙ্গীতের সিঁড়িতে ক্রমাগত হারাচ্ছে, উড়ে যাচ্ছে ভেষজ উপায়ে গড়া সমস্ত স্বাভাবিক শিষ্টাচার।